বেশ কয়েকদিন অসুস্থ থাকার পর রমজানের আগেই ইহজাগতিক সফর শেষ করেছেন দেশের জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা মাওলানা লুৎফর রহমান। ব্রেইনস্ট্রোক করে রাজধানী ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কক্ষে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন রোববার (৩ মার্চ) বিকেলে।বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরিনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মাওলানা লুৎফর রহমান। বর্ণাঢ্য জীবনে অসংখ্য পরিচয়ে নিজেকে রাঙিয়েছেন তিনি। শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, লেখক, ইসলামি বক্তা, এমনকি রাজনীতিবিদ—সব পরিচয়েই উজ্জ্বল ছিলেন তিনি। কোরআন ও হাদিসের আলোকে দালিলিকভাবে তাফসির পেশের মাধ্যমে নতুন ধারা সৃষ্টি করেছেন।১৯৪০ সালে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা লুৎফুর রহমান। তার পিতা মাওলানা আব্দুস সামাদ ছিলেন একজন স্বনামধন্য আলেম ও সমাজসেবক। মাতার নাম বেগম মাকসুদা খাতুন। পিতার হাতেই ইসলামী শিক্ষার সূচনা করেন মাওলানা লুৎফুর রহমান।
দেশ-বিদেশে তুমুল জনপ্রিয় বরেণ্য আলেম লুৎফুর রহমানের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় স্থানীয় কালাইয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে। ১৯৬১ সালে সেখান থেকে দাখিল পাস করেন। ১৯৬৩ সালে আলিম পাস করেন রায়পুর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে। এরপর ১৯৬৫ সালে ফাজিল এবং ১৯৬৭ সালের কৃতিত্বের সাথে কামিল পাশ করেন তিনি। ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি তিনি নবাব ফয়জুন্নেসা কলেজ থেকে ডিগ্রি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রজীবনের প্রায় প্রতিটি পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস প্রাপ্ত মেধাবী ছাত্র লুৎফর রহমান কর্মজীবনে রাজখালী আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর পাশাপাশি নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জ নির্বাচনী এলাকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর রাখেন। এমপি না হতে পারলেও নিজ উদ্যোগে তিনি অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কান্ট্রি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মাওলানা লুৎফর রহমান। ইসলামের দাওয়াত বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, কোরিয়া, জাপানসহ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অসংখ্য দেশ ভ্রমণ করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই মুফাসসিরে কোরআন।
মাওলানা লুৎফর রহমান মাতৃভাষা বাংলার বাইরে ইংরেজি, আরবি, ফারসি, উর্দু, হিন্দি এবং সংস্কৃতসহ বহু ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। কোরআন প্রচারের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করে দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন মাওলানা লুৎফর রহমান।