প্রতিনিধি : চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে সৃষ্ট অতিষ্ঠ গরম থেকে রেহাই পেতে বৃষ্টি চেয়ে লক্ষ্মীপুরসহ দেশজুড়ে ইসতিসকার নামাজ পড়া হয়েছে। বৃষ্টির কামনায় দু-হাত তুলে কান্নায় চোখ ভাসিয়েছেন অনেকেই। তবে এ মুহূর্তে বৃষ্টি চাইছেন না ধানচাষিরা। মাঠে সোনালি ফসল। সে ফসল ধরে তোলার পর বৃষ্টি এলেই ভালো, মন্তব্য কৃষকদের। সব মিলিয়ে দেশে আরও দুই সপ্তাহ বৃষ্টিহীন থাকুক, এমনটাই চান লক্ষ্মীপুর জেলার মেঘনার চরাঞ্চলের ধান ও সয়াবিন চাষিরা।ঘাম ঝরিয়ে ফলানো ফসল ঘরে তুলতে না হয় আরেকটু বেশি ঘাম ঝরাবেন। তবু যেন বজ্রসহ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি এসে ফসলের কোনো ক্ষতি না করুক এই কামনা কৃষকদের।
এদিকে খরতাপ উপেক্ষা করেই মাঠে ধান কাটছেন কৃষকেরা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। তীব্র রোদ, ভ্যাপসা গরম কিছুই তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারছে না। কারণ, গরমের চেয়ে ক্ষেতের সোনালি ফসল অতি মূল্যবান।
জেলার তিন উপজেলার মেঘনা উপকূলীয় চরাঞ্চলসহ ইউনিয়নগুলোতে ক্ষেত জুড়ে এখন সোনালি ফসল। বোরো ধান কাটার ধুম পড়েছে। কোনো কোনো কৃষকের ধান পেকে গেছে, কিছু ক্ষেতের ধান আধপাকা অবস্থা।
সব মিলিয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মাঠের ধান গোলায় তোলার সময় পাবেন কৃষকেরা। সেইসঙ্গে লক্ষ্মীপুরে সয়াল্যান্ডে আছে সয়াবিনও । মাঠের বেশিরভাগ সয়াবিন পেকে গেছে। ধানের পাশাপাশি পাকা সয়াবিন কাটা শুরু করেছেন কৃষকেরা। ধান এবং সয়াবিন কাটা থেকে শুরু করে শুকিয়ে ঘোলায় তোলা পর্যন্ত প্রয়োজন পড়ে রোদের।
কৃষকেরা জানিয়েছেন- রোদ আর গরম যত বেশিই হোক, ফসল ঘরে তোলার এখনই মোক্ষম সময়। সেই সঙ্গে গো-খাদ্যের জন্য ধানের খড়ও তারা শুকাতে পারছেন এ রোদে।
রায়পুরের চরকাছিয়া গ্রামের কৃষক মাহমুদ আলি প্রায় এক একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। জমির কিছু অংশের ধান তিনি কেটে ফেলছেন ইতোমধ্যে। তীব্র রোদ মাথায় নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে জমি থেকে ধান কাটতে দেখা গেছে মাহমুদ আলিকে। আধপাকা ধান এখনো তার ক্ষেতে দেখা যাচ্ছে।
এ মুহূর্তে বৃষ্টির দরকার কিনা জানতে চাইলে এ কৃষক মাহমুদ এ প্রতিবেদককে বলেন, মেঘনায় এপ্রিল মাসেই মাস ধরা বন্ধ। তাই সবাই ধান ও সয়াবিন নিয়ে ব্যাস্ত। আমাদের জন্য রোদ বা গরম কোনো সমস্যাই না। এ মুহূর্তে বৃষ্টি হলে আমাদের জন্য চরম ক্ষতি। ক্ষেতে পানি জমে গেলে স্বাভাবিকভাবে ধান কাটতে পারব না। ধানের খড়ও শুকাতে পারব না। ধান এবং খড় শুকানোর জন্য কড়া রোদের প্রয়োজন, যা এ মুহূর্তের জন্য একেবারে উপযোগী।
তিনি আরো বলেন, আমরা শরীরের ঘাম ঝরিয়ে ফসল ফলাই। সেই ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত আমাদের দেহের ঘাম ঝরাতেই হবে। তীব্র রোদ আমাদের জন্য কোনো ব্যাপার না, এটা কৃষকের জন্য আল্লাহর আশীর্বাদ।
ভর দুপুরে জালিয়ারচর গ্রামের হজল মাঝি ও গোপরান নামের দুই কৃষি শ্রমিক মেশিনে ধান মাড়াই করছেন। রোদ থেকে কিছুটা প্রশান্তির আশায় মেশিনের ওপর ছাতা টাঙিয়েছেন। কিন্তু রোদের তীব্রতায় হাঁসফাঁস অবস্থা তাদের।
তারা জানায়, এখন ধান মাড়াইয়ের সময়। ধান মাড়াই করে দিলে বিপরীতে ধান পাবেন তারা। বৃষ্টি হলে সহজে ক্ষেতে ধান মাড়াই করা যাবে না। তাই রোদ উপেক্ষা করে মাঠে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন তারা।
একই এলাকার কৃষক আবদুল আলিম বলেন, ক্ষেতে আধাপাকা ধান আছে। এ মুহূর্তে যদি বৃষ্টি হয়, কিছু ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ারি সম্ভাবনা রয়েছে। আর ক্ষেতে পানি জমলে ধান কাটতে ভোগান্তি হবে। মাঠে ধান রাখা যাবে না। সবমিলিয়ে ধান ঘরে তুলতে হলে বাড়তি খরচ হবে। তাই আবহাওয়ার এখন যে অবস্থায়, আমাদের কৃষকদের জন্য উপযোগী।
চরবংশী ইউপির চরপক্ষি গ্রামের কৃষক হজরত আলি বলেন, এক কানি জমিতে সয়াবিন ছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঠ থেকে সয়াবিন কেটে ঘরে তুলতে পেরেছি। সেগুলো শুকানোর জন্য উপযুক্ত রোদ ছিল।
কৃষক আবিদ খান ও সুরুজ মিয়া বলেন, ক্ষেতে কৃষকের সয়াবিন ও ধান রয়েছে। সেগুলো খরায় কাটতে হয়। এ মুহূর্তে কৃষকরা মাঠ থেকে সয়াবিন এবং ধান কাটা শুরু করেছেন। বৃষ্টি হলে ভোগান্তি বাড়বে, খরচও বেশি হবে। ফলন অপচয় হওয়ায় ঝুঁকি থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলাতে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান এবং ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন জানান আরও ১০-২২ দিন আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে মাঠ থেকে সয়াবিন তুলতে পারবে কৃষকেরা। এছাড়া বোরো ধান কাটার জন্য এখন উপযুক্ত সময়। তীব্র খরতাপেও কৃষকেরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। কৃষকদের স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। মাঠে কাজের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ পানি পান করতে হবে। বিশেষ করে স্যালাইন মিশ্রিত পানি পান করা পরামর্শ দিব৷ রোদে কাজ করার সময় ফুলহাতা পোশাক ও মাথায় টুপি রাখার পরামর্শ দেন কৃষি কর্মকর্তা।