ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে ঝোড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে। এতে টানা দুদিন বিদ্যুৎহীন রয়েছে রামগতি উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা। প্রায় ৩৪ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ পেয়েছে লক্ষ্মীপুর পৌরবাসী। তবে আসা-যাওয়ার ওপরে রয়েছে বিদ্যুৎ।রিমালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রামগতি ও কমলনগর উপজেলায়। এরমধ্যে কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবারহ স্বাভাবিক হলেও রামগতিতে এখনো বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মোবাইলে চার্জ নেই, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ রয়েছে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মোটর চালু করতে না পারায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের বাসিন্দা মাকছুদ, অন্তর, নিজাম, মান্নানসহ কয়েকজন জানান, ঝড় শুরু হওয়ার আগেই রোববার (২৬ মে) দিনগত রাত ২টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরপর থেকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডেই প্রায় ৩৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে শহরের কোথাও কোনো গাছপালা উপড়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়নি। এরপরও দীর্ঘসময় বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়েছে পৌরবাসীকে। মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিদ্যুৎ আসে। তবে নিরবচ্ছিন্ন থাকছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও জেলা সদর ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। পুরো রামগতি উপজেলাও বিদ্যুৎহীন। পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা দুর্ভোগে রয়েছেন। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে মোবাইল সেবা ও ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) আওতাধীন। আর সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়নসহ রামগঞ্জ, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘূর্ণিঝড়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৩৫টি খুঁটি ভেঙে গেছে। হেলে পড়েছে শতাধিক খুঁটি। গাছপালা ভেঙে পড়ে বিভিন্ন স্থানে প্রায় আড়াই হাজার মিটার তার ছিঁড়ে গেছে। সোমবার (২৭ মে) দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ৩৩ কেভির লাইন চালু হয়েছে। এতে সদর, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবারহ দেওয়া হয়। ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুৎ লাইনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কমলনগরে। তবুও এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় লাইন চালু করা হয়েছে।১৩টি সাব-স্টেশনের মধ্যে আটটি চালু করা হয়েছে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আসাদুজ্জামান খান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হচ্ছে কমলনগর ও রামগতি উপজেলা। কমলনগরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে রামগতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আমাদের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। লাইন মেরামত হলেই পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল আমিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে আমাদের ৭-৮টি খুঁটি উপড়ে পড়েছে। গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ে বিভিন্ন স্থানে লাইন ছিঁড়ে গেছে। এজন্যই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।