লক্ষ্মীপুর রায়পুরে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজে ধীরগতি

প্রতিরিধি : মেঘনা উপকূলীয় পৃথক দুটি বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত দ্বিতল ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য মাঠ ফাঁকা করা হয়েছে পাঁচ বছর আগে। সেখানে চার তলা ভবন নির্মাণের জন্য তিন কক্ষসহ একতলা ভবনের ৫০ শতাংশ কাজ করা হয়। কিন্তু গত চার বছরেও আর কোনও অগ্রগতি নেই। একদিন কাজ করলে তো চারদিন কাজ করছেনা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ১১৪ বছরের পুরোনো চরআবাবিল সিডিউলড কাস্ট উচ্চ বিদ্যালয়ের এবং ৭০ বছরের পুরোনো চরলক্ষি জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের। নতুন ভবনের ছাদ করা হলেও বাকি কাজ না হওয়ায় কাটছে না শ্রেণিকক্ষ-সংকট। ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। ফলে বিপাকে পড়েছে পৃথক দুটি বিদ্যালয়ের ২৫ জন শিক্ষক-১২ কর্মচারী ও ১২ শতাধিক শিক্ষার্থী।।
সরেজমিনে দুটি বিদ্যালয়ই দেখা গেছে, মাঠের-পূর্ব ও পশ্চিম পাশে এ ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নির্মাণসামগ্রী। চারতলা ফাউন্ডেশনের নতুন ভবনের জন্য একতলা ভবনের ছাদসহ ৫০ শতাংশ কাজ করা হয়। মাঠে খেলাধুলার যেকোনও সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন ভবন না হওয়া আট কক্ষবিশিষ্ট দোতলা পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছেড়ে পাশের আরেকটি ভবনে পাঠদান করানো হয়। একটি কক্ষে প্রধান শিক্ষক, আরকটি কক্ষে সহকারী শিক্ষকদের অফিস কক্ষ রয়েছে। এরপর থেকে ছাত্রীদের একটি কমনরুমে ক্লাস চলছে।।।
দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, চার তলা ভিত্তির একতলা ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রাজস্ব প্রকল্প থেকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
চরআবাবিল উচ্চ বিদ্যালয়টির নির্মাণ কাজ পায় লক্ষ্মীপুর শহরের মেসার্স বাপ্পি ট্রেডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চরলক্ষি জনতা উচ্চ বিদ্যালয় ভবনটির কাজ পায় রায়পুরের ঠিকাদার মাসুদ খান ট্রেডার্স। ২০২০ সালের ২১ জুন পৃথক নির্মাণকাজ শুরু করে তারা। ২০২২ সালের মার্চেই কাজ শেষ করার কথা।
শিক্ষার্থীরাও জানায়, কাজ ফেলে রাখায় তাদের চলাচল ও খেলাধুলায় অসুবিধা হচ্ছে। আগে মাঠের অবস্থা আরও বেশি খারাপ ছিল। বেশ কিছুদিন শিক্ষকরা বলার পর ঠিকাদারের লোকজন কিছুদিন কাজ করে। কিন্তু কাজ আর শুরু হয়নি। তাদের খেলাধুলা আর হয়না।
রায়পুর চরআবাবিল সিডিউলড কাস্ট এর প্রধান শিক্ষক বিজয় কৃজ্ঞ বলেন, গত ১১৪ বছর পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দোতলা ভবন ছেড়ে পাশের নতুন আরেকি ভবনে পাঠদান করতে হচ্ছে। কাজ শুরু করে ভবনের ছাদ করে ঠিকাদারের লোকজন আসেন না। তারা মাঠের মধ্যে মাটি ফেলে রেখেছেন। ঠিকাদার বাপ্পিকে একাধিকবার ফোন করলেও ধরেন না। একই সময়ে শুরু হওয়া অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো নির্মাণকাজ আগেই শেষ হয়ে গেছে।।
চরলক্ষি জনতা বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চারতলা ভিত্তির একতলা ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব প্রকল্প থেকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দরপত্রপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। রায়পুর শহরের মেসার্স মাসুদ খান ট্রেডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। ওই বছরের ২১ জুন নির্মাণকাজ শুরু করে তারা। ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন পাঁচ মাস কাজ করে কাজ বন্ধ করে দেয়।।
চরলক্ষ্মী জনতা উচ্চবিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, গত ৩০ বছর পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দোতলা ভবন ছেড়ে ১৩ জন শিক্ষক দিয়ে ৬০০ শিক্ষার্থীকে আশ্রায়ণকেন্দ্র ভবনে পাঠদান করতে হচ্ছে। কাজ শুরু করে ভবনের ছাদ করে ঠিকাদারের লোকজন আর আসেন না। এর আগে তারা মাঠের মধ্যে মাটি ফেলে রেখেছেন।
ঠিকাদার বাপ্পি ও মাসুদ খান জানান, যখন দরপত্র হয়, করোনার সময়ে নির্মাণসামগ্রীর দাম কম ছিল। হঠাৎ রড-সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা কিছুটা বিপদে পড়েছেন। এ ছাড়া কাজের বিপরীতে তিনি বিল করার পরেও সেখান থেকে একটাকাও দেয়া হয়না।
এ জন্য কিছুটা অর্থসংকটও রয়েছি। শিগগিরই আবার কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া কাজটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ইতিমধ্যে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের আবেদন করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের মাধ্যমিক শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী মাইনুল হক বলেন, পৃথক স্কুল দুটি চারতলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। ঠিকাদার দের কিছু বিল দেয়া হয়েছে। কাজ খুব দ্রুত শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তিনি।

আরও পড়ুন