প্রতিনিধি: অস্বাভাবিক জোয়ার এবং গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষনের ফলে সৃষ্ট স্রোতে লক্ষ¥ীপুরের রামগতি উপজেলার বিবিরহাট- রামগতি সড়কের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সেতু যেকোন সময় ধসে পড়তে পারে। ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কের ঝুঁকিপূর্ন সেতুগুলো হচ্ছে- ১০মিটার দৈর্ঘ্যের দক্ষিণ চর রমিজ সেতু (হুরিগো তেহমুনি), ৭ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রাশিওয়ালাগো সেতু (রাশিওয়ালা মোড়) এবং মালি বাড়ি সংলগ্ন ১৫মিটার দৈর্ঘের স্টীল সেতু।২০ আগস্ট (মঙ্গলবার) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিন চর রমিজ সেতু এবং রাশিওয়ালাগো মোড়ের সেতুগুলোর দুপাশের সংযোগ সড়কে ভাংগনসহ বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে দুটি সেতুরই পাশ্ববর্তী গার্ডার ওয়ালগুলো ধসে পড়ে সড়কে ভাংগন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও এ সেতুর দক্ষিন পাশে মেঘনা নদী এবং বঙ্গোপসাগর থেকে আসা মাছধরার ট্রলারগুলো নোঙর এবং ধাক্কা দেওয়ার ফলেও সেতুটির ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে উঠছে।
রাশিওয়ালাগো মোড়ের সেতুটির পূর্ব-দক্ষিণ পাশের কার্পেটিং করা সড়ক ভেংগে সেতুর বেশ কয়েক ফুট ভেতরে চলে এসেছে খাল। গতো কয়েকদিন আগে একই পাশে থাকা প্রায় ৫০ফুট দৈর্ঘ্যের গাইডওয়াল খালে ধসে পরেছে। এছাড়াও স্রোতের তোড়ে সরে গেছে দুপাশের মাটি। এ সেতুটি মোড়ের মধ্যে হওয়ায় কোনার ভাংগন ও ফাটল অংশ ঝুঁকিপূর্ন হয়ে ওঠায় গাছের ডাল দিয়ে ব্যারিকেট দিয়ে রেখেছে এলাকাবাসী।
মালি বাড়ি সংলগ্ন কংক্রিটের সেতুটি ৬ বছর আগে ধসে পড়ে বেশ কয়েকমাস যোগাযোগ বন্ধ থাকে। জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের তৎকালীন নির্বাহি প্রকৌশলী এবং স্থানীয় বড়খেরী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এর সহযোগিতায় অন্য জায়গা থেকে ২০মিটার দৈর্ঘ্যের একটি স্টীল সেতু প্রতিস্থাপন এবং একাধিকবার সংষ্কার করেন। গতো কয়েক বছরে সেতুটি বেশ কয়েকবার ধসে পড়লেও প্রতিবারই মেরামত করে চলাচল উপযোগি করা হয়। ইতিমধ্যে জোয়ারের তীব্র স্রোতের দুপাশের সংযোগ সড়কের মাটি সরে সেতুটি আবারো ঝুঁকিপূর্ন হয়ে উঠেছে।
চর রমিজ এবং বড়খেরী ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, এ সড়কে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০হাজার মানুষ এবং অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। এ সড়কে দিয়ে পাঁচটি প্রাইমারি তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি নুরানী ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা যাতায়াত করেন। সড়কের দু মাথায় বিবিরহাট এবং রামগতি বাজারের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার রয়েছে। বর্তমানে এ সড়কটি রামগতি উপজেলা সদরের সাথে বয়ারচর, টাংকি এবং নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার সাথে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক। তিনটি সেতুর যেকোন একটি সেতুও যদি এ বর্ষা মৌসুমে ধসে পড়ে দুর্ভোগে পড়তে হবে তিনটি ইউনিয়ের প্রায় ৫০হাজার মানুষকে। এর ফলে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে।
স্থানীয় আবদুল মালেক, আবুল খায়ের, মামুন এবং সিকদারসহ বেশ কয়েকজন জানান, এ সড়কে ভারি যানবাহন চলাচল করায় যে কোন সময় সেতুগুলো ধসে পড়তে পারে। দ্রুত দুপাশে প্যারাসেটিং কিংবা গাইডওয়াল করে বালিভর্তি জিওব্যাগ না ফেলা হলে চলতি বর্ষায়ই সেতুগুলো ধসে যেতে পারে। নদীর নিকটবর্তী হওয়ায় জোয়ার স্রোত এবং ঢেউ এসে আঘাত করায় দুপাশের মাটি সরে গেছে।
উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক সৈয়দ আমজাদ হোসেন জানান, তিনি ছুটিতে থাকায় বিষয়টি অবগত নন। লক্ষ¥ীপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহি প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, নদী কাছে হওয়ায় সেতুগুলো রক্ষা করা কঠিন। পানি উন্নয়ন বোর্ড স্রোতের গতি রোধে কাজ না করলে এ ঝুঁকি আরো বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত সেতুগুলো পরিদর্শনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পাঠানো হবে।