রামগতিতে পানিবন্ধী ৫০ হাজার মানুষ

সারোয়ার হোসেন, রামগতি (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা:গত কয়েকদিনের অস্বাভাবিক জোয়ার এবং টানা অতিবৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট বন্যায় লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে পানিবন্ধী ৫০হাজার মানুষ। টানা বৃষ্টি এবং পূর্নিমার প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে উপজেলার চর গাজী, চর রমিজ, চর আলগী, চর পোড়াগাছা এবং চর বাদাম ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চর পোড়াগাছা এবং চর বাদাম ইউনিয়নের পুরোটা ডুবে আছে পানিতে। যতদুর চোখ যায় কেবল পানি আর পানি। রামগতি – তোরাবগঞ্জ বেড়ীবাঁধের চর বাদাম, চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের বাঁধের উত্তর পার্শ্বের বেশিরভাগ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বেড়ীবাঁধের ঢালে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী এলাকার আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে।
২২ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- এসব এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পানি উঠেছে। বন্যায় আমন বীজতলা, রোপা আমন ক্ষেত, পুকুর, ডোবা-নালা, পথঘাট, রাস্তাসহ সবকিছুই পানিতে তলিয়ে আছে। এলাকাবাসীদের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ভূলুয়া নদী দখল করে বাড়ি ঘর নির্মান, নদীতে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, মাছের ঘের তৈরি, নদীর দু পাশে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ সড়ক নির্মান, নদী সংলগ্ন খাল দখল, খালে পানি প্রবাহ বন্ধকারী জাল বসানো, পুল ও কালভার্টের মুখ বন্ধ করাসহ বেশ কয়েকটি কারনে পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। গতো কয়েক বছরেও এমন বৃষ্টি দেখেননি বলে জানান তারা। বন্যার পানিতে পাঠদান সম্ভব না হওয়ায় ইতিমধ্যে উপজেলার পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি মাদরাসা বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় সময় কাটছাঁট করে চলছে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জোয়ার ও বৃষ্টির পানির তীব্র স্রোতে ধসে পড়েছে আলেকজান্ডার- সোনাপুর সড়কের চরআলগী ইউনিয়নের নবিয়ল মোড়ের একটি সেতু। এছাড়াও বিবিরহাট-রামগতি বাজার সড়কে যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে আরো তিনটি সেতু।
উপজেলা আবহাওয়া অফিসসূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার ৫৮মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও গত পাঁচ দিনে ৩৭০মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা। পূর্ণিমার কারনে গতো কয়েকদিন বৃষ্টির পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক গুন বেশি।
পানি উন্নয়ন অফিসসূত্রে জানা যায়, গতকালকের পূর্ণিমার প্রভাবের কারনেই গতো কয়েকদিন ধরে মেঘনা উপকূলে অস্বাভাবিক জোয়ার দেখা গেছে। এতে উপকূল সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। পূর্নিমার প্রভাব কেটে গেলেই আগামী দু তিন দিনের মধ্যে জোয়ারের অস্বাভাবিকতা কমবে। খাল ও নদী দখল বিষয়ে ইতিমধ্যে দখলকৃত স্থান এবং দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এসব দখলমুক্ত করার উদোগ নেওয়া হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৫৫০ হেক্টর বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষকরা প্রায় ৮কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির কবলে পড়েছেন। এছাড়াও ১হাজার ২শ হেক্টর রোপিত আমন চারা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
বীজতলা নষ্ট হওয়ায় কৃষকদের মাঝে নতুন করে দেখা দিয়েছে বীজ ও আমন চারা সংকটের আতংক। সময়মত বীজ ও চারা না পেলে উপজেলার বেশিরভাগ চাষ উপযোগি জমি অনাবাদি থাকার আশংকা করছেন কৃষি অফিস এবং কৃষকরা। উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় ৯২ হাজার ৮শ’ জন চাষীর মাধ্যমে এবার ২৩ হাজার ২শ’ হেক্টর আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলায় যে পরিমান বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটার ১৫০হেক্টর কৃষক নিজ থেকে পুষিয়ে নিতে পারবে। বাকীটা ডিলার, পাশ্ববর্তী জেলা-উপজেলা থেকে সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। উপজেলার ডিলারদের পর্যাপ্ত বীজ উঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা ও বিভিন্ন স্থানে বীজের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে সময়মত বীজ পেলে লক্ষ্যমাত্রার দুইভাগ আমন ধান চাষ করা সম্ভব হবে। বাকিটা কৃষক চেষ্টা না করলে আপাতত পূরণ করা সম্ভব হবেনা। এর ফলে প্রায় ৮হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থাকার আশংকা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (রামগতি) ইমতিয়াজ মাহমুদ জানান, পূর্নিমার প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ার দেখা দিয়েছে। আগামী দু এক দিনের মধ্যে এটি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশাবাদী তিনি। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন খাল ও নদী খুব দ্রুত দখলমুক্ত করা হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীন নৌ দুর্ঘটনা ও পূর্বাভাস রামগতি কেন্দ্রের উচ্চ পর্যবেক্ষক মো: সোহরাব হোসেন জানান, আগামী দু এক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত কমার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি কমলে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাইদ তারেক জানান, আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে অতিবৃষ্টি এবং জোয়ারের পানি দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করায় বীজের সংকট সংকট তৈরি হয়েছে। ফেনী অঞ্চলের বন্যার পানি এ অঞ্চলে প্রবেশ করলে সংকট ও দুর্ভোগ আরো বাড়বে।
রামগতি উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসক সৈয়দ আমজাদ হোসেন জানান, আমি ছুটিতে ছিলাম। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হওয়ায় ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে ফেরার পথে রয়েছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন