প্রতিনিধি : গত একমাস ধরে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতিতে ৮টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় অতিবৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতা এবং গত এক সপ্তাহ ধরে ভূলুয়া তীরবর্তী এলাকসমূহে বন্যার প্রকোপে পানিবন্ধী হয়ে হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করলেও মাঠে নেই স্থানীয় সরকারের কোন জনপ্রতিনিধি।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতা-কর্মীরা গা ঢাকা দিলেও অন্যান্য দল সমর্থিত সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় থাকার পরেও বন্যার্তদের সাহায্য সহযোগিতায় তাদের দেখা মেলেনি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসেবে উপজেলা চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসক সৈয়দ আমজাদ হোসেন এর নেতৃত্বে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ।
এছাড়াও মাঠে আছেন উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা এসএম আব্দুল্লাহ বিন সফিক, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: কামনাশীস মজুমদারের নেতৃত্বে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মো: মোসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, উপজেলা প্রকৌশলী মো: সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: জসিম উদ্দিন, কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক, উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়, বড়খেরী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফেরদৌস আহম্মদসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
উপজেলায় বন্যার্তদের আশ্রয়দানে খোলা ৪৯টি স্থায়ী এবং বেশ কয়েকটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রসমূহ দেখভাল করছেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম। গত শুক্র, শনি এবং রবিবার বন্যা কবলিত এলাকাসমূহ সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে বন্যাদুর্গতের সাথে আলোচনায় এমন চিত্রই চোখে পড়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন নেতা-কর্মীকে বন্যার্তদের সহায়তায় তেমন কোন কার্যক্রম চোখে না পড়লে সরব আছেন উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো। ইতিমধ্যে গত শনিবার বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন এবং ত্রাণ বিতরণ করে গেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রিয় নেতা।
লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রিয় বিএনপির সহ শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজানের নেতৃত্বে উপজেলাজুড়ে বন্যার্তদের সহায়তার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পৌর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আকবর হোসেন জানিয়েছেন, সাবেক এ সাংসদ নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন বন্যা যতদিন থাকবে ততদিনই সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। গত ৩দিন ধরে তিনি নিজে উপস্থিত থেকে রামগতি-কমলনগরে বন্যা দুর্গত এলাকাসমূহ পরিদর্শন এবং ত্রাণ বিতরন করেছেন।
এছাড়াও উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুর রহিম এবং পৌর আমির আবুল খায়ের এর নেতৃত্বে উপজেলায় বন্যার্তদের উদ্ধার এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) জামায়াতের কেন্দ্রিয় আমির ডা: শফিকুর রহমান রামগতি উপজেলার বন্যা দুর্গত এলাকাসমূহ পরিদর্শন করে গেছেন।
এর বাহিরে উপজেলা জেএসডি’র নেতাকর্মীরাও মাঠে রয়েছেন বন্যার্তদের সহায়তায়। উপজেলা আমির জানান, উপজেলার প্রতিটি ইউনিটকেই সর্বাত্মকভাবে বন্যার্তদের পাশে থাকার নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ব্যক্তি ও সংগঠন পর্যায়ে বন্যা দুর্গতদের পাশে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা নিয়ে সরব আছে- স্বপ্ন নিয়ে, রামগতি স্টুডেন্টস্ কমিউনিটি ঢাকা, সাবেক জাতীয় ফুটবলার আকবর হোসেন রিদন, সাবেক জাতীয় বিতার্কিক ও সংগঠক শাকিল মাহবুব, শিক্ষক মাকসুদুর রহমান, স্বদিচ্ছা ফাউন্ডেশন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, মরহুম জমির আলী স্মৃতি সংসদ, আলোর দিশারী ব্লাড ব্যাংকসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
সারাদেশের ন্যায় লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ১টি পৌরসভার মেয়র এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ৩টি পদ বাতিল করা হয়।
পৌরসভার ১২জন কাউন্সিলর, ৮টি ইউনিয়নের ৯৬জন ইউপি সদস্যের পদ বাতিল না করা হলেও তাদের কাউকেই বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। সদস্য সাবেক স্বতন্ত্র সাংসদ মো: আবদুল্যাহ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল, মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিন, ৮ইউপি চেয়ারম্যানসহ এবং বেশিরভাগ ইউপি সদস্য গত বিশ দিন ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন।