নিজস্ব সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুরে পরকিয়া প্রেমে বাধা দেওয়ায় রৌশন আক্তার লিপিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখার করার অভিযোগে স্বামী ইসমাইল হোসেন সুজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলায় সুজনের পরকিয়া প্রেমিকা সুরমা আক্তার সুমিকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত সুজনের পরকিয়া প্রেমিকা সুমির বিরুদ্ধে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এতে আদালত তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত সুজন জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছে। তিনি আদালতে উপস্থিত হননি। খালাসপ্রাপ্ত সুমি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত সুজন সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের ঘরোয়ার বাড়ির নুর মোহাম্মদের ছেলে। খালাসপ্রাপ্ত সুমি একই বাড়ির মো. সুমনের স্ত্রী।
আদালত ও এজাহার সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে সুজনের সঙ্গে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা ধীতপুর গ্রামের লিপির পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এরপর লিপি জানতে পারেন, স্বামী সুমি নামের নারীর সঙ্গে পরকিয়া প্রেম করছে। লিপি বিষয়টি তার মাকে জানায়। এতে তার মা স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি অবগত করে এবং সুজনকে সংশোধন হতে পরামর্শ দেয়। এসব নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া লাগতো। ২০২০ সালের ২ মে সকালে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হয়। চিৎকার চেচামেচিতে আশপাশের লোকজন এসে তাদেরকে শান্ত করে চলে যায়। পরে দুপুরে লিপিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর সুজন গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে মরদেহ ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। ঘটনাটি অন্যদিকে প্রভাবিত করতে লিপি আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। একইদিন লিপির মা আলেয়া বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় সুজন ও পরকিয়া প্রেমিকা সুমির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে লিপিকে শ্বাসরোধে হত্যার পর গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে রাখার সত্যতা পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চন্দ্রগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম সুজন ও সুমির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা দেয়।