নিজস্ব প্রতিবেদক: লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত হত্যার ঘটনায় থানায় কোনো মামলা করা হয়নি।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) সকালে সদর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক তাফাজ্জল হোসেন চৌধুরী টিটু এ আল্টিমেটাম দেন। সদর হাসপাতালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, নোমান ও রাকিবের মরদেহের সুরতহাল শেষ হয়েছে। সদর হাসপাতালে মর্গে তাদের ময়নাতদন্ত চলছে। বিকেল ৫টায় বশিকপুর মাদ্রাসা মাঠে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। খুনি যেই হোক পুলিশ তা শনাক্ত করবে। দ্রুত খুনিদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে এ ঘটনায় চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাশেম জিহাদীকে সরাসরি দায়ী করছেন নোমান ও রাকিবের স্বজনরা।
নোমানের বড় ভাই ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেন, কাশেম জিহাদী ছাড়া আমাদের কোনো শত্রু নেই। তিনিই আমার ভাই ও রাকিবকে হত্যা করেছেন। ১৯৯৬ সালের পর থেকে বশিকপুরে যত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সবগুলো এই কাশেম জিহাদীই ঘটিয়েছেন। আমি চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিতাম প্রয়োজনে, কিন্তু কেন আমার ভাইকে খুন করা হলো? প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। নির্বাচনে হারার পর থেকে বিভিন্ন সময় কাশেম জিহাদী হুমকি দিয়ে আসছিল। পরিকল্পিতভাবেই আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে।
রাকিবের বাবা রফিক উল্যা বলেন, নির্বাচনের পর থেকেই জিহাদী আমার ছেলেকে হুমকি দিয়ে আসছে। গেল বছর ২০ ডিসেম্বর পোদ্দার বাজার কায়েকোবাদ অডিটোরিয়ামে জিহাদী আমার ছেলেকে প্রকাশ্যে মারধর করেছে। তখন মামলা দিতে চাইলে পুলিশ নেয়নি। আমার ছেলেকে জিহাদীই হত্যা করেছে। নির্বাচনে তার বিরোধিতা করায় আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি কাশেম জিহাদীর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বুধবার সকালে কাশেম জিহাদীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। কাশেম জিহাদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তদন্ত করা হবে। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ সাংবাদিকদের বলেন, দুষ্কৃতকারীরা গুলি করে নোমান ও রাকিবকে হত্যা করেছে। ঘটনাটি তদন্ত চলছে। কারা, কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে আশা করি তা বের হয়ে আসবে। র্যাবকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) রাত পৌনে ১০টার দিকে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট এলাকায় সন্ত্রাসীরা যুবলীগ নেতা নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিবকে গুলি করে। এর আগে নোমান পোদ্দার বাজারে ছিলেন। তার সঙ্গে থাকা অন্যদেরকে বিদায় দিয়ে তিনি রাকিবকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে নাগেরহাটের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে নাগেরহাটের কাছাকাছি পৌঁছলে সন্ত্রাসীরা তাদের গুলি করে। তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও মোবাইল নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থল গিয়ে স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদেরকে পড়ে থাকতে দেখে। মাথায় ও মুখে গুলিবিদ্ধ হয়ে নোমান মারা যান। গুলিবিদ্ধ রাকিবকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনিও মারা যান।
নোমানের পরিবার সূত্র জানায়, ৫ এপ্রিল ওমরা করার জন্য নোমান সৌদি আরব যান। ২০ এপ্রিল তিনি দেশে ফেরেন। এরপর ঢাকার বাসা থেকে তিনি ঈদের দিন বশিকপুর গ্রামে আসেন। নোমানের স্ত্রী ও দুই শিশু ছেলে সন্তান রয়েছে।