অস্থির পেঁয়াজ বাজারে নেই স্বস্তির খবর

বাজারে ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন হুঁশিয়ারির পরও কমছে না দাম। বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই।

 

শুক্রবার (২৬ মে) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর, কারওয়ানবাজার ও পুরান ঢাকার শ্যামবাজারসহ বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

 

অস্থির পেঁয়াজের বাজারে নেই স্বস্তির কোনো খবর। কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাড়ছে দাম। তবে চলতি সপ্তাহে দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও এখনও কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। এতে দিশেহারা সাধারণ ভোক্তারা।
ক্রেতারা জানান, পেঁয়াজের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। আমদানি কম থাকার অজুহাত দিয়ে বাজারে দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি কোরবানির ঈদ সামনে রেখেও পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠছে।

 

পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে বাজার করতে আসা প্রত্যয় জানান, ‘৫ কেজির নিচে পেঁয়াজ বিক্রি করতে চাইছে না বিক্রেতারা। প্রতি কেজি ৮০ টাকা করে হলে দাম পড়ে ৪০০ টাকা। এত টাকার পেঁয়াজ কিনলে বাকি বাজার করা সম্ভব হবে না।’
এ বাজারে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ৫ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায়। আর আড়তদাররা ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি করছেন ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। একই চিত্র কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর কাঁচাবাজারেও।
পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, আড়তদাররা ঠিকমতো সরবরাহ না করায় দাম বাড়ছে পেঁয়াজের। আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। তাই বাধ্য হয়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

 

পেঁয়াজ সংকটের কথা স্বীকার করে আড়তদাররা জানান, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকার পাশাপাশি বন্ধ আমদানিও। তবে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি চালু হলে দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমবে।
এদিকে বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের হুঁশিয়ারিই শেষ ভরসা ভোক্তাদের। দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সম্প্রতি পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) দিতে কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

 

রবিবার (২১ মে) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছিলেন, ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা চলছে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যায়, আবার কিছুটা কমে। দেশের পেঁয়াজের বাজার দর দু-একদিনের ব্যবধানে ওঠানামা করে। তাই দু-তিন দিনের মধ্যে দাম না কমলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।
এ ছাড়া ১১ মে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছিলেন, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন পর্যাপ্ত হওয়ায় আমদানি কমিয়ে দেয়া হয়েছিল, এখন প্রয়োজনে তা বাড়ানো হবে। এ ছাড়া বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী থাকা পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে থাকলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ বাড়ানো হবে।
১৪ মে কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার জানিছিলেন, কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে পেঁয়াজ আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে পেঁয়াজের বাজার সবসময় মনিটর করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশি। তবে শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হবে।
পেঁয়াজের উৎপাদন, চাহিদা ও আমদানির তথ্য তুলে ধরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছিল, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি। চলতি বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুত আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন।

 

এ বিষয়ে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকারের পেঁয়াজ আমদানির হুঁশিয়ারির কারণেই এখন পর্যন্ত দাম স্থিতিশীল আছে। না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে আরও বাড়ত দাম।
শ্যামবাজারের মের্সাস রাজ ট্রেডিংসের মালিক আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘পেঁয়াজ মজুত করার জিনিস না। পেঁয়াজের দাম সম্পূর্ণ নির্ভর করে সরবরাহের ওপর। বাজারে সরবরাহ থাকলে দাম কমে, আবার সরবরাহ কমে গেলে দাম বেড়ে যায়।’
এ সময় সরকারের নানা হুশিয়ারির কারণে বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানান রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘সরকারের পেঁয়াজ আমদানির হুশিয়ারিতে অসাধু ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা পেঁয়াজর দাম বাড়াতে পারছে না। না হলে পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যেত।’ তবে ভারত থেকে পেঁয়াজ এলেই দাম প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমে যাবে।
আর মের্সাস নিউ বাণিজ্যালয়ের মালিক শহিদুল বলেন, সরকারের হুঁশিয়ারি কাজে দিয়েছে। দেশের কোথাও কোথাও কমছে দাম। তবে শিগগিরই আমদানি চালু না হলে দাম আবারও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে ঊর্ধ্বমুখী আদার বাজারও। বাজারে প্রকারভেদে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। মূলত আদার দাম বৃদ্ধির জন্য এলসি ও ডলার সংকটকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

 

শ্যামবাজারের মের্সাস রাইয়ান এন্টারপ্রাইজের মালিক মাণিক সাহা বলেন, ‘আদা আমদানি হয়। এতে প্রয়োজন হয় ডলার ও এলসি। তবে দেশে চলমান এলসি ও ডলার সংকটের কারণে আদার দাম কমছে না। এখন ১১৫ শতাংশ মার্জিন দিয়েও এলসি পেতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ডলার সংকট কেটে গেলে ও এলসি স্বাভাবিক হলে আদার দাম কমবে।’
পেঁয়াজ, আদা ও রসুন কাঁচামাল হওয়ায় মজুত ও সিন্ডিকেটের কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান মাণিক সাহা। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে পাইকারিতে বার্মা আদা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা। ভারতীয় কালো আদা ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে এ দাম ছাড়িয়েছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত।

 

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, খাদ্যপণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এখানে কোনো জটিলতা নেই। ব্যবসায়ীরা একটি পুরোনো অজুহাত দিয়ে দাম বাড়াচ্ছে।

আরও পড়ুন