জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সর্বোচ্চসংখ্যক শান্তিরক্ষী পাঠানো ১২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালের জুলাই মাসের পর থেকে এ অবস্থান বহাল। তার আগেও কখনো প্রথম, কখনো দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের পরের অবস্থান যথাক্রমে নেপাল, ভারত, রুয়ান্ডা ও পাকিস্তানের।
দেশের জন্য এই সম্মানজনক অবস্থার মধ্যে সোমবার (২৯ মে) বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ মহাসচিব বাণী দিয়েছেন।
১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া শুরু। এরপর ৩৫ বছরে বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের এক গর্বিত অংশীদারে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী এই মিশনে দায়িত্ব পালন করছে ১৯৯৩ সাল থেকে। বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা এ মিশনে অংশগ্রহণ করছেন ১৯৮৯ সাল থেকে। ওই বছর নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ পরিবারের সদস্য হয়।
বর্তমানে জাতিসংঘের ১৪টি মিশনে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের মোট সাত হাজার ৪৩৬ শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন।
তাদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর ছয় হাজার ৪৩ জন, নৌবাহিনীর ৩৫৯ জন, বিমানবাহিনীর ৫২২ জন এবং পুলিশের ৫১২ জন সদস্য। বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা বর্তমানে ৫৭২।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের যাত্রা শুরুর পর গত ৩৫ বছরে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ৪০টি দেশ বা স্থানে ৬৩টি মিশন সম্পন্ন করেছেন। এতে বাংলাদেশের মোট এক লাখ ৮৮ হাজার ৫৫৮ জন শান্তিরক্ষী প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। এর মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর এক লাখ ৫১ হাজার ৯৩০ জন, নৌবাহিনীর ছয় হাজার ৭০৪ জন, বিমানবাহিনীর আট হাজার ৬৪০ জন এবং পুলিশের ২১ হাজার ২৮৪ জন সদস্য।
তাদের মধ্যে নারী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা তিন হাজার ৩০০। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ১৪৪ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী জীবন হারিয়েছেন এবং ২২৫ জন আহত হয়েছেন। গত বছরই জীবন হারিয়েছের ছয়জন। তাঁরা হলেন—সৈনিক মো. শরীফ হোসেন, সৈনিক মো. জাহাঙ্গীর আলাম, সৈনিক মো. জসীম উদ্দিন, ল্যান্স করপোরাল কাফি মজুমদার, সার্জেন্ট মো, মঞ্জুর রহমান ও পুলিশ কনস্টেবল মো. মনিরুজ্জামান। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে গত বৃহস্পতিবার মর্যাদাপূর্ণ মরণোত্তর ‘ড্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ প্রদান করেছে জাতিসংঘ।
কর্মসূচি
আইএসপিআর জানায়, আজ জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের সব দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে। সকালে শহীদ শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে সকালের ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-২০২৩’ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন।
পরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন রয়েছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।
এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনাররা, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, তিন বাহিনীর প্রধানরা, সংসদ সদস্যরা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), পুলিশের মহাপরিদর্শক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।