আমাদের অজান্তেই দেশে বাকশাল গঠন করা হয়েছে: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, যেভাবে বাকশাল গঠন করা হয়েছিলো, সেভাবেই সরকার গঠন করা হয়েছে। আমাদের অজান্তেই দেশে বাকশাল গঠন করা হয়েছে।

শনিবার (৩ জুন ) নরসিংদী শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

জিএম কাদের বলেন, শাসন ব্যবস্থার সকল প্রতিষ্ঠান একটি দলের সদস্য হয়ে গেছে। দেশের বাকি মানুষ যেনো মানুষ নয়। সাধারণ মানুষ খেলো কি খেলো না, তা দেখার কেউ নেই। বাকশালের মত একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে স্থায়ীত্ব দেওয়া হয়েছে। সামনের নির্বাচনে বাকশালের মত সরকারকে চির স্থায়ীত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। দেশে বাকশালের মত দল হয়েছে, এখানে সাধারণ মানুষের কোন স্থান নেই। সাধারণ মানুষ বিচার পায় না, সাধারণ মানুষের কথা গ্রাহ্য করা হয় না, সাধারণ মানুষ নির্বাচন করতে পারে না। সাধারণ মানুষ নির্বাচন করে জিততে পারবে না, এটাই বাস্তবতা।

তিনি বলেন, দেশে একটি দল আছে। সেই দল স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ শাসন করছে। সেই দলের মধ্যে প্রশাসন, আর্মি এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সবাই সদস্য। সংসদ ও সংসদের স্পিকার সেই দলের হয়েই কথা বলছেন। সবাইকে সেই দলই রক্ষা করছে। বিচার বিভাগ নিয়ে আমরা গর্ব করতাম। কিছু দিন আগে সরকারি দলের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি বলেছেন, প্রধান বিচারপতিকে আমরা নামিয়ে দিয়েছি। কে নামিয়ে দিয়েছে? আওয়ামী লীগ নামিয়ে দিয়েছে। তার মানে বিচার বিভাগকেও ওই দলের সদস্য হতে হবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন সবাই ওই দলের সদস্য হয়েছে। তারা সবাই আওয়ামী লীগের এবং তাদের নেতা একজন। সেই নেতা যা বলেন, সবাই তাই করেন। তাই নির্বাচন কিভাবে সুষ্ঠু হবে? সেখানে দুর্নীতিবাজরা কিভাবে শাস্তি পাবে? কীভাবে মেধাবিরা চাকরি পাবে? সবাই দলীয় আস্তরনের মধ্যে আছে। যে নির্দেশ আসে সবাই সে নির্দেশ মেনে চলে।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করছি, আমরা নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসিনি। সরকারের কথা দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। একদলের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। তাহলেই দেশের মানুষ বেঁচে থাকার অবলম্বন পাবে। দেশকে মুক্ত করা না গেলে হাজার-হাজার কোটি টাকা আবারও বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। সরকারের বিপক্ষে সত্য কথা বললে কোন গণমাধ্যম প্রকাশ করতে পারে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে গণমাধ্যমের গলা টিপে রাখার জন্য। শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে, আগামীতে ফাঁসির ব্যবস্থা করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আইন করে, নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে দেশে লুটপাটের ব্যবস্থা হচ্ছে। দেশকে বাঁচাতেই আমাদের রাজনীতি। বাজেটের কারণে সামনের দিনগুলো আরো কঠিন হয়ে উঠবে। সেজন্য সরকারের কোন প্রস্তুতি নেই। সরকার জান বাঁচাতে নির্বাচন পার করতে চাচ্ছে। তারপর তারা দেখিয়ে দেবে তারা কোথায় আর জনগণ কোথায়।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। দেশের মানুষের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। সামনের দিনগুলো কেমন করে চলবে তা নিয়ে চিন্তিত সবাই। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে আয় দিয়ে সংসার চালাতে পারছে না। মধ্যবিত্তরা এখন নিম্নবিত্ত নয়, দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেট কখনোই জনবান্ধব হতে পারে না। যে ট্যাক্স বিদ্যমান আছে তাই দেশের মানুষ দিতে পারছে না। কিন্তু আরো ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে, জিনিস পত্রের দাম আরো বাড়বে। মানুষের আয় বাড়েনি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করে তারা চাকরি হারাচ্ছে। সরকার করোনা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দোহাই দিয়ে জিনিস পত্রের দাম বাড়িয়েছে। এখন আইএমএফের পরামর্শে আরেক দফা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে। সব কিছুর দাম বাড়াচ্ছে। সারাদেশে অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজ করছে, এ দায় সরকারের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজ করছে কিন্তু আমাদের দেশের মত কোন দেশের মানুষ এত অসহায় নেই। মুল্যস্ফীতির কারণে মানুষ নিষ্পেষিত হচ্ছে, সামনের দিকে হয়তো অনেকেই না খেয়ে মারা যাবে।

তিনি বলেন, বেশির ভার কলকারখানা বন্ধ হচ্ছে বিদ্যুতের অভাবে। শতভাগ বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে লাখ-কোটি টাকা তসরুপ করেছে। সরকার ঘোষণা দিয়েছিলো দু‘শো ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো বিদ্যুৎ দেওয়া নয়। সরকারের তেল, গ্যাস ও কয়লা কেনার পয়সা নেই। এখন হাতে পায়ে ধরে বাকিতে গ্যাস, তেল ও কয়লা কিনতে হচ্ছে। গোঁজামিল দিয়ে দেশ চলছে। সরকারের হাতে বৈদেশিক মূদ্রা নেই। বকেয়া ঋণ পরিশোধ করলে সরকারের হাতে আর টাকা থাকবে না। এ কারণে, বিদেশ থেকে মাল আনতে পারছে না সরকার। দেশের মানুষ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখেননি কিন্তু সরকার কয়লার বিল বকেয়া রেখেছেন কেন? মানুষের দুর্দশার জন্য বর্তমান সরকার দায়ী। সরকার মানুষকে বিভ্রান্ত করে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পেকা লুটর নামে লাখ-কোটি টাপাট করে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। এ কারণেই বিদ্যুৎ দিতে পারছে না সরকার। কিছু কিছু কোম্পানির সাথে সরকার চুক্তি করেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন হোক বা না হোক ডলারে তাদের পেমেণ্ট করতে হবে। এলএনজি খালাস হোক বা না হোক প্রতিদিন খালাস করার জায়গার জন্য একলাখ ডলারের বেশি দিতে হচ্ছে। এসব কোম্পানি হচ্ছে সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু পরিবারের। আমরা পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবার দেখেছি এখন ২২ হাজার পরিবার সৃষ্টি হয়েছে যারা সরকারের সহায়তায় লুটপাটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছে।

জাতীয় পার্টি মহাসিচব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশের মানুষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীন বা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন চায় না। দেশের মানুষ চায় ভোটাধিকার। দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে চায়। গ্রামের মানুষ দিনে ৩ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পায় না। দেশের মানুষ মুক্তি চায়। বিদ্যুতের নামে সরকার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে কিন্তু বিদ্যুৎ দিতে পারেনি। আবার বিএনপি বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরত মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছিলো। এই দুটি দলকে দেশের মানুষ আর চায় না।

নরসিংদী জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শফিকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব ফখরুল ইমাম এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আক্তার এমপি, আলমগীর সিকদার লোট । স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শামীম রানা ভূঁইয়া, হাজী মো. নূরুল ইসলাম, আব্দুল কাদির কিবরিয়া, মো. দেলোয়ার হোসেন, এডভোকেট সারোয়ার মোল্লা, শফিকুল ইসলাম সুমন, এডভোকেট কামাল উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার মো. শহিদুল ইসলাম, আক্কাস আলী, মো. দেওয়ান আলী গাজী, মো. হাবিবুর রহমান, হারুন অর রশিদ হিরা, এডভোকেট আবুল হাসনাত মাসুম, মো. নেওয়াজ আলী ভূঁইয়া, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, জাকির হোসেন মৃধা।

আরও পড়ুন