প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঘর-কর্মসংস্থান চাইলেন ‘জল্লাদ’ শাহজাহান

দীর্ঘ ৩২ বছর পর কারাগার থেকে বের হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ঘর ও কর্মসংস্থান চেয়েছেন জল্লাদ শাহজাহান। রোববার (১৮ জুন) কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয়ে এ দাবি জানান শাহজাহান।

তিনি বলেন, ‘আমি অপরাধ করেছি। সে জন্য জেলে এসেছি, সাজা ভোগ করেছি। আপনারা এখন আমার প্রতি মায়া দেখাচ্ছেন- লোকটা এত বছর জেল খেটেছে। আমার পেছনের দিকটা যদি আপনারা টান দেন। তাহলে আমি অতীতে কেমন ছিলাম। এখন আমি মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার মতো অতীতের সবকিছু ভুলে গেছি। এখন আমি কীভাবে আগামী দিনে চলব, থাকব সেটা হচ্ছে বিষয়।’

এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমার বাড়ি, ঘর নেই। এত বছর জেল খাটার পর আমার কিছুই নেই। আমি এখন কারাগার থেকে বেরিয়ে নিজের বাড়িতেও যাচ্ছি না। আমি আরেকজনের বাড়িতে গিয়ে উঠছি এখন। আমি এখন কি করে খাব? কোথায় যাব? কি করব? আমার এখন আর কিছু করারও বয়স নেই।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটিই আবেদন, আমাকে যেন বাড়ি-ঘর ও একটি কর্মসংস্থান দিয়ে চলার মতো কিছু করে দেন। এটিই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন।’না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ফাঁসি আমার হুকুমে করা হয়নি। রাষ্ট্রের হুকুমে আমি ফাঁসি দিয়েছি।’

জল্লাদ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে। ৭৩ বছর বয়সী শাহজাহান ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ এবং মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ ছিলেন।

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, শাহজাহান ভূইয়া ১৯৯১ সালে গ্রেপ্তার হন। তাকে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে রাখা হয়। কারাগারে ভালো কাজ ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে জল্লাদের দায়িত্ব পালনের জন্য তার সাজার মেয়াদ ১০ বছর মওকুফ (রেয়াত) করা হয়।

পাশাপাশি শাহজাহানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় আবেদনের প্রেক্ষিতে কারা কর্তৃপক্ষ তার জরিমানার ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে। ফলে দীর্ঘ ৩১ বছর ছয়মাস দুইদিন কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দিজীবন কাটানোর পর এখন তিনি মুক্ত।

কারাগারের তথ্যানুযায়ী, শাহজাহান ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৬ জনের ফাঁসির দড়ি টেনেছেন। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন ছয়জন। এছাড়া চারজন যুদ্ধাপরাধী, দুজন জেএমবি সদস্য ও অন্যান্য আলোচিত মামলার ১৪ আসামি।

আরও পড়ুন