লক্ষ্মীপুরে কৃষক দল নেতা সজিব হোসেন হত্যাকান্ড অরাজনৈতিক। পুলিশ বা কারো গুলিতে নয়, ধারালো অস্ত্র বা ছোরার আঘাতে সজিবের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ। তবে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও নিহত সজিবের দাদা মো. হানিফ মিয়া বলছেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সজিবকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
বুধবার (১৯ জুলাই) বেলা সোয়া ১১ টার দিকে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এবং দুপুর ১ টার দিকে এ্যানি চৌধুরীর গোডাউন রোড এলাকার বাসভবন প্রাঙ্গণে গায়েবানা জানাযায় বিএনপি নেতারা পাল্টাপাল্টি এ বক্তব্য দেন। সজিবের মরদেহ নিয়েই জানাযা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ তা করতে দেয়নি। সজিবের মরদেহ পুলিশ সদরের চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ধন্যপুর গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়েছেন।
এদিকে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ এবং সজিব হত্যাকান্ডে লক্ষ্মীপুর শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বুধবার দুপুর সোয়া ১ টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহরে র্যাব-১১ এর ৪টি গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে। এসপি মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, লাশ উদ্ধারের স্থান থেকে সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সজিব আহত অবস্থায় ফিরোজা ভবন নামে একটি বাসায় ঢুকে পড়ে। মৃত্যুর আগে সেখানকার জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে সজিবের কথা হয়েছে। সজিব ওই ব্যক্তিকে বলেছে, সে বিএনপির প্রোগ্রামে আসেনি। ৪-৫ জন লোক তাকে কুপিয়েছে। তার কাছে তারা টাকা পায়। সে বিয়েও করেছে। এরপর সজিব আর কোন কথা বলতে পারেনি। ঘটনাস্থলে থাকা ব্যক্তিরা ৯৯৯ এ কল করে সজিবের চিকিৎসার জন্য পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন। কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স চালককেও কল করেছেন। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে হামলার ঘটনার কারণে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা যেতে পারেনি। পুলিশ যাওয়ার আগেই প্রচুর রক্তক্ষরণে সজিব মারা যায়।
বিএনপির হামলায় আমাদের ২৫-৩০ জন পুলিশ আহত হয়েছে। তারা হাসপাতাল ও দোকানঘর ভাঙচুর করেছে। তারা কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় কোন মামলা হয়েছে কি না ও কত রাউন্ড রাবার বুলেট, টিয়ারশেল, গুলি ছোঁড়া হয়েছে তাও জানাননি তিনি। শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির লক্ষ্মীপুরের গোডাউন রোড এলাকার বাসভবন প্রাঙ্গণে সজিবের আত্মার মাগফেরাত কামনায় গায়েবানা জানাযা ও দোয়া হয়েছে। এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু, যুগ্ম-আহবায়ক হাছিবুর রহমান, জেলা কৃষকদলের সভাপতি মাহবুব আলম মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। নিহত সজিবের দাদা মো. হানিফ মিয়া চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য।
তিনি বলেন, সজিব আমার সঙ্গে বিএনপির প্রোগ্রামে এসেছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই।
জানাযার শুরুতে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সজিবকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এর নেতৃত্বে ছিল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এসপি এখন বলছেন, সজিব হত্যাকান্ড অরাজনৈতিক। এতে বুঝা যাচ্ছে, কতিপয় পুলিশ এ হত্যাকান্ডে আওয়ামী ছাত্রলীগকে সহযোগিতা করেছে। এ খুনের সঙ্গে জড়িত সকলের তথ্য আমরা সংগ্রহ করছি। এ ঘটনায় মামলা হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এসপি সাহেব লক্ষ্মীপুরকে আর রক্তাক্ত করবেন না। বিএনপি নেতাকর্মীরা আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা জেগে উঠেছি। শেখ হাসিনার সরকার পতনে রাস্তায় নেমেছি। আমাদের ২০০ থেকে ২৫০ জন নেতাকর্মী আহত। এরমধ্যে ৪-৫ জন আহত আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে শুনেছি পুলিশ আমাদের বিরুদ্ধে ৩ টি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোন মামলা-হামলার কাছে আমরা মাথা নত করি না। যতদিন পর্যন্ত এ অবৈধ সরকার পদত্যাগ না করবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
সজিব হত্যার প্রতিবাদে আগামিকাল (বৃহস্পতিবার) দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচি আসছে। কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে সারাদেশের মতো লক্ষ্মীপুরেও একইভাবে কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রসঙ্গত, বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলার পর লক্ষ্মীপুরে কৃষক দল নেতা সজিব হোসেন হত্যাকান্ড ঘটে। সজিব সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধন্যপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানা কৃষকদলের সদস্য।