বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যদি আগামী নির্বাচনে পরাজিত হয় তবে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় মৌলবাদীরা সংক্রিয় হয়ে উঠবে। এতএ আঞ্চলিক সহিংসতা ও অস্থিরতা বেড়ে যাবে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ভারতেও। দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু-এর সাংবাদিক প্রণয় শর্মার বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে এমনটি ওঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে যদি শেখ হাসিনা হেরে যান তাহলে বাংলাদেশ দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়বে।
এছাড়া ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার যদি ক্ষমতা হারায় তাহলে এতে ভারত ‘চিন্তিত’ হয়ে পড়বে। সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহিংসতাও বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশে আগামী জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর বাংলাদেশের এই নির্বাচন নিয়ে সগরম হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ভারত ইতোমধ্যে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে।
প্রতিবেদনটির শুরুতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশিদের মধ্যে যে ভারতবিরোধী মনোভাব রয়েছে সেখানে শেখ হাসিনার সরকার খুব সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে নির্ভরশীল ও কাছের মিত্র। তবে যদিও ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘বিগ পাওয়ার’ হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের এই অবস্থানে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন। আর বছর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন তাদের অবস্থান শক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে এরপর বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৌড়ঝাঁপ করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে এবং জানুয়ারিতে একটি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক নির্বাচন নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছে। এর অংশ হিসেবে নির্বাচনে কারচুপির চেষ্টাকারীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জিততে সহায়তা করেছে এ বাহিনী। এতে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে হেরফের এবং বিরোধী দলকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। এরমাধ্যমে তিনি নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড গড়েছেন।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বলেছেন বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। তবে তা সত্বেও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতাকর্মী, সরকারি সংস্থা ও কর্মকর্তাদের লাগাম টেনে ধরতে তার ওপর চাপ দিচ্ছে পশ্চিমারা। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে। যেখানে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এক স্বতন্ত্রপ্রার্থীর ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওই হামলার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন কঠোর বার্তায় সরকারের সমালোচনা করেছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার আয়োজিত গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানাননি। যেখানে ভারত-পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এছাড়া গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব ব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পর বাইডেন প্রশাসন যে তাকে উপেক্ষা করেছিল সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন বাইডেন বাংলাদেশের গণ্তন্ত্রকে রক্ষা নয়, ধ্বংস করতে কাজ করছে। একবার সংসদে তিনি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের যে কোনো দেশের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি মুসলিম দেশ হয়।’