পাউবোর ‘নীরবতায়’ কমলনগরে মেঘনায় তীব্র ভাঙন

নিজস্ব সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনার ভাঙনে মসজিদ, বিদ্যালয় ভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভয়াবহ নদীভাঙনে উপজেলার পাটারীরহাট, ইসলামগঞ্জ, লুধুয়া ফলকন ও মধ্য চরফলকন এলাকায় বাস্তবায়নাধীন নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বালুভর্তি জিও ব্যাগের বাঁধ ধসে পড়ছে। গত এক সপ্তাহে ওসব এলাকার জিও ব্যাগের বাঁধের প্রায় ৩০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

 

তাদের অভিযোগ- বালু ও শ্রমিক সংকট দেখিয়ে পাউবোর ঠিকাদাররা যথাসময়ে বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করতে পারেনি। এ কারণে ভাঙন তীব্র রূপ নিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, মেঘনার অব্যাহত ভাঙন থেকে কমলনগর ও রামগতি উপজেলাকে রক্ষায় ২০২১ সালের ১ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পাউবো একই বছরের আগস্টে ৯৯টি প্যাকেজ করে টেন্ডার আহ্বান করে। এর আওতায় এ পর্যন্ত ৪৩টি ভাগে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এলাকার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে কমলনগর উপজেলায় ২৬ এবং রামগতি উপজেলায় ১৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাঁধ নির্মাণে কাজ করছে।

সরেজমিন উপজেলার চরফলকন ও পাটারীরহাট ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাউবোর কার্যাদেশ পেলেও এখনও অনেক ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারেননি। বালু ও শ্রমিক সংটের অজুহাত দেখিয়ে তারা যথাসময়ে কাজ শুরু করেননি। আবার ওই সব এলাকার যেসব অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ হয়েছে তা-ও যথাযথভাবে হয়নি। এসব কারণে এখন উজানের পানির চাপে ইউনিয়ন দুটির পাটারীরহাট, ইসলামগঞ্জ, লুধুয়া ফলকন ও মধ্য চরফলকন এলাকায় মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। যেসব স্থানে কাজ শুরু করা হয়নি, ওই সব স্থান থেকে ভাঙনে গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আবার যেসব স্থানে জিও ব্যাগের বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে দেখা দিয়েছে ধস। ওই বাঁধের পাটারীরহাট বাজারের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের তিনটি, লুধুয়া ফলকন এলাকার দুটি ও মধ্য চরফলকন এলাকার একটিসহ অন্তত ছয়টি স্পটের ৩০০ মিটার অংশ নদীতে ধসে পড়েছে। এতে করে এলাকাবাসী এখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন।

উপজেলার পাটারীরহাট ইউনিয়নের ইসলামগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে যেন মেঘনার ভাঙনের তাণ্ডবলীলা চলছে। ইতোমধ্যে ভাঙনে পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে ইসলামগঞ্জ বাজারটি। নদীগর্ভে চলে গেছে ইসলামগঞ্জ জামে মসজিদটিও। এখন বিলীনের পথে দক্ষিণ-পশ্চিম চরফলকন ইসলামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনসহ তিনটি পাকা ভবন।

একই ইউনিয়নের পাটারীরহাট এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, ওই এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য অনেক আগে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও ঠিকাদাররা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কাজ শুরু না করে কালক্ষেপণ করেন। পরে এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করলেও তা যথাযথভাবে করা হয়নি। যে কারণে, এখন পানির চাপে জিও ব্যাগ মেঘনাগর্ভে ধসে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে পাটারীরহাট বাজারের উত্তর ও দক্ষিণ অংশে তিনটি স্পটের প্রায় দেড়শ মিটার অংশের জিও ব্যাগের বাঁধ নদীতে ভেঙে পড়েছে।

উপজেলার চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন বাঘা জানান, হঠাৎ করে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় তার ইউনিয়নের লুধুয়া ফলকন ও মধ্য চরফলকন এলাকায় নির্মাণাধীন জিও ব্যাগের বাঁধের কিছু অংশ ধসে পড়েছে। সমস্যাটি দ্রুত সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

পাউবো লক্ষ্মীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, নদী উত্তাল থাকায় নদীভাঙন রোধের কাজের যথাযথ বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গেল অর্থবছরে কাজ কম হলেও চলতি অর্থবছরে কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তবে বাঁধ নির্মাণ কাজে গাফিলতির বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

আরও পড়ুন