রায়পুরের কানিবগারচরে ব্যাপক ভাঙন

বর্ষাকাল এলে বুকটা ধপ করে ওঠে। নদী ভাঙতে ভাঙতে আর আবাদি জমি, ফলের বাগান, প্রিয় বাড়িঘর সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব আমিসহ বহু মানুষ। আর হারানোর কিছু নাই’।

বুধবার (২৩ আগস্ট) মনির দেওয়ার মাঝির বাড়ি মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সর্বস্ব হারিয়ে হতাশ মনির দেওয়ান (৭৫) এই কথাগুলো বলেন। যৌবনকাল থেকে মেঘনা নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন তারা।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা কানিবগারচর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনার সংযোগ নদী গত প্রায় ১০ বছর ধরেই ভাঙছে। বর্ষা মৌসুম শুরু থেকে ভাঙনে নদী কাঁদতে থাকে। গেল বছরগুলোর চেয়েও ভাঙনের তীব্রতা এবার বেশি। গত ১০ দিনে ভেঙে নিয়ে গেছে ২০টি বসতঘর। এছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবার।

 

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ তথ্যগুলো জানিয়েছে।

দেওয়ার মাঝির মতো কানিবগারচর গ্রামের রহমান মাঝিরও একই অবস্থা। আজও তিনি মেঘনার বুকে সবকিছু হারানোর দৃশ্য, স্মৃতি ভুলতে পারেন না । একটু সময় পেলে ছুটে আসেন মেঘনার পাড়ে আর নীরব-নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকেন নদীর দিকে। যেখানে ছিল তাদের জমি-জমা, বসতভিটা ও বাগান। তার শেষ সম্বল ঘরটুকুও গত বছর কেড়ে নিয়েছে মেঘনা নদী। পাঁচ সদস্য নিয়ে ভালোই চলছিল তার সংসার। কিন্তু সব হারিয়ে আজ তিনি নিঃস্ব।

দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ছালে মিন্টু ফরাজী বলেন, ১০ বছরে প্রায় তিন শতাধিক একর আবাদি জমি ও শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনে কানিবগারচর গ্রাম তলিয়ে গেলে ভূমিহীন হয়ে পড়বে কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ। বর্তমানে মোল্লার হাট এলাকার পুরান বেড়ির মাথার শতাধিক ঘরবাড়িসহ দোকানপাঠ ভাঙনের কবলে রয়েছে।

বুধবার (২৩ আগস্ট) সকালে উপজেলার ৮নম্বর চরবংশী ইউনিয়নের কানিবগারচর গ্রামে সরেজমিনে দেখা গেছে, গত ১০ দিনে প্রায় ৭ একর আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। মনির দেওয়ান, সাদেল মাঝি, রহমান মাঝি, জোহুরা খাতুন, হানিফ হরকার, মোস্তফা হরকার, রহমান মাঝি, আনোয়ার হাওলাদার ও সহিদ উল্যাসহ ২০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে।

 

বর্তমানে চরম হুমকির মুখে রয়েছে কাদির হাওলাদার, শুকুর আলী সর্দার, সাইফুল ইসলাম ও শেফালি বেগমের বাড়িসহ ৩০টি পরিবার। গ্রামে নদীভাঙন অব্যাহত থাকায় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ইমতিয়াজ বলেন, আমাদের লোকবল কম থাকায় সব বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া সম্ভব হয় না। তবে মেঘনা নদী ভাঙনরোধে স্থানীয় এমপি সাহেবের ডিও লেটারের মাধ্যমে একটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হয়ে এলে দ্রুত কাজ করা হবে।

আরও পড়ুন