প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১ সালের পর এই বিএনপি-জামাত দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল। মা বোনদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছিল। ছয় বছরের শিশুও তাদের অত্যচার থেকে রেহাই পায়নি। সারাদেশে দখলবাজি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ছিলো প্রতিনিয়ত।
৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হয় অস্ত্রের ঝনঝনানি, শুরু হয় সেশনজট।নরাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা পৌনে চারটার দিকে সমাবেশস্থলে পৌঁছান তিনি।
সমাবেশে দেয়া প্রদত্ত ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, মিলিটারির ছত্রছায়ায় যারা ক্ষমতায় এসেছে, সেই বিএনপি এদেশের কোন কল্যাণ চায় না। আগে দারিদ্র্যের হার যেখানে ছিল ৪১ ভাগ, আমরা সেটাকে নামিয়ে এনেছি ১৮ ভাগে। আমাদের লক্ষ্য ছিল, একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। ১৯৯৭ সাল থেকে কাজ শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ পরিবারকে আমরা ঘর তৈরি করে দিয়েছি বিনা পয়সায়। আমরা চাই, শেখ মুজিবের এই দেশে কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকটা জেলায় মেডিকেল কলেজ করে দিচ্ছি। আরো পাঁচটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করছি। বিনা পয়সায় আমরা বই দিচ্ছি। উচ্চ শিক্ষার জন্য বৃত্তি দিচ্ছি, উচ্চশিক্ষায় বিশেষ বরাদ্দ দিচ্ছি। সব দেশের সঙ্গে সমানতালে মিলিয়ে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছি।
আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ করব। ২০০৮ এর নির্বাচনে ২০২১ রুপকল্প ঘোষণা দিয়েছিলাম। আজকে সেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশকে আরো উন্নত করা। এজন্য সারাদেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নত করছি। পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের প্রতি অপবাদ চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। একটা ব্যাংকের এমডি সরকারি বেতনধারী এক ব্যক্তি।
দশ বছর তিনি বেআইনিভাবে ব্যাংক চালিয়ে আবারও সেখানে থাকতে হবে, সেই লোভে আমাদের ওপর বারবার চাপ দিলো একটা বড় দেশ। তাকে এমডি পদে রাখা না হলে নাকি পদ্মা সেতু বন্ধ করে দেবে। কিন্তু আদালত তো তার বয়স কমাতে পারেনি।
এক বছর পর্যন্ত সে থাকতে পারবে, কিন্তু তার সত্তরের উপর বয়স। সুতরাং সে মামলায় সে হেরে যায়। এরপর হিলারি ক্লিনটন নিজে অর্ডার দিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়। তখন আমরা বলেছিলাম, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো, কারো কাছে হাত পেতে নয়। সেটা করেছি, বিশ্বকে দেখিয়েছি- বাংলাদেশ পারে, বাংলাদেশের মানুষ পারে।
জাতির পিতা ১৯৭১ সালে বলেছিলেন, ‘এই বাঙালিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না’। আমরা কিন্তু সেই জাতি। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়েছি- আমরা চাইলে নিজের টাকায় নির্মাণ করতে পারি। এরপরই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে গেছে।
এরপর আমরা অনেকগুলো পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করছি। দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি। এসবের ফলে আজকে মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। সারাদেশে আজকে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক করে দিচ্ছি। এতে বাংলাদেশের মানুষ খুব অল্প সময়ের মধ্যে যেকোনো জেলা থেকে ঢাকা আসতে পারছে। এখন ১ লাখ ২২ হাজার ৫২২ কিলোমিটার সড়কে পরিণত হয়েছে। আরো ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সারাদেশে এখন ওয়াইফাই কানেকশন, ব্রডব্যান্ড কানেকশন পৌঁছে গেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে এখন আমাদের ছেলেমেয়েরা ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং প্রজেক্ট’ এর মাধ্যমে শিক্ষা নিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে গ্রামে বসে বিদেশে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেকের এসব ভালো লাগে না। যাদের চোখ অন্ধ আমি বলব, অনেক আধুনিক আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি বাংলাদেশে। যারা এখন অন্ধ, যারা আমাদের উন্নতি দেখেন না- তারা দশ টাকা টিকিট করে সেখানে গিয়ে যেন চোখটা দেখিয়ে আসেন। আসলে তাদের মনের দরজায় অন্ধকার। মানুষের জীবন মান উন্নত হচ্ছে এটা তাদের পছন্দ না। আমাদের লক্ষ্য সমাজের কোন অংশ যেন পিছিয়ে না থাকে।
আমি ছাত্রলীগের ছেলে মেয়েদের একটা অনুরোধ করবো, জাতির পিতা কারাগারে বসে বসে যে বই লিখেছেন অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ইত্যাদি বইগুলো পড়তে। বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ডকুমেন্ট থেকেও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। সবার এগুলো পড়া দরকার।
জাতির পিতা বলেছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে প্রথম প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব। ছাত্রলীগ যেন সেই নেতৃত্ব দিতে পারে এভাবেই গড়ে উঠুক। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মনে রাখতে হবে, ছাত্রলীগকে জাতির পিতা অনেক মূল্যায়ন করতেন।
আমরা ঘোষণা দিয়েছি স্মার্ট বাংলাদেশ করব। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট ম্যানপাওয়ার, স্মার্ট গভর্নর, স্মার্ট সোসাইটি হবে এ দেশ। এজন্য আমাদের অনেক কাজ করতে হবে।
ছাত্রলীগকে বলবো, ক্লাস রুম থেকে শুরু করে যেখানেই বসবাস করব নিজের প্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গ্রামের বাড়িতে কোন জমি যেন অনাবাদি না থাকে। যাদের জমি অনাবাদী তাদেরকে উৎসাহিত করবে যেন এগুলোতে ফসল ফলায়। পরিবেশ রক্ষার জন্য ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করবে।
আজকে স্যাংশান, যুদ্ধের কারণে সারা পৃথিবীতে মুদ্রাস্ফীতি। এজন্য খাদ্য উৎপাদন করব। আমরা আমাদের উৎপাদন বাড়িয়েছি
তিনি বলেন, আমরা সাধারণ মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা করেছি। যখন বয়স হয়ে যাবে কর্মক্ষমতা হারাবে তখন সেখান থেকে প্রতিমাসে টাকা নিয়ে নিজেরা চলতে পারবেন। আমি দেখলাম, বিএনপির কিছু নেতারা বললেন-এটা নাকি আমাদের নির্বাচনের ফান্ড তৈরির করার জন্য। এর থেকে লজ্জার আর কি হতে পারে? নিজেরা কিছু করতে পারেনি অথচ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে! এই পেনশন স্কিমের আমানত কখনো খোয়া যাবেনা, কেননা এটা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
২০৪০ এ স্মাট বাংলাদেশের স্মার্ট কান্ডারি হবে এই ছাত্রলীগের ছেলে-মেয়েরা। আমি ডেলটা প্ল্যান করে দিয়েছি। এই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। কিন্তু এই ছাত্রলীগকে সব সময় সজাগ থাকতে হবে। ছাত্রলীগের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।