রামগঞ্জে দীর্ঘ ত্রিশ বছরেও সড়কে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে দীর্ঘ ত্রিশ বছরেও কাঁচা সড়কে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। ফলে ধুলোবালি আর বর্ষা মৌসুমে কাঁদাপানির সাথে যুদ্ধ করে জীবন পার করছে গ্রামবাসী। এমন পরিস্থিতি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলাধীন কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের জয়পুরা গ্রাম এলাকার দুই কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে। সড়কটি ধরে প্রতিদিন হাজারো গ্রামবাসী উপজেলা শহর, সোনাপুর, দর্ঘা বাজারসহ পার্শ্ববর্তী হাজীগঞ্জ বাজারে যাতায়াত করলেও পথচারীদের সুবিধার্থে দীর্ঘকালেও হয়নি কাঁচা রাস্তা পাকাকরণের কাজ। এ নিয়ে গ্রামবাসী বার বার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েও কোন সুফল পাচ্ছে না। ফলে নিত্যদিনকার চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামের নারী-শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে অসুস্থ রোগী ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের।

 

স্থানীয় সূত্র জানায়, তাৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে রামগঞ্জের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের জয়পুরা গ্রামের ওই সড়কটির নাম মজিব নগর করা হলে সেসময় বিএনপি নেতাদের তোপের মুখে পড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরও ছাড়া হতে হয়। কিন্তু, আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও সেই মজিব নগর সড়কে আজো পর্যন্ত লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। এতে বিব্রত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জয়পুরা গ্রামের ওই সড়কটি ধরে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াত রয়েছে। স্থানীয় জয়পুরা সাঈদুর রহমান মিরান শাহ্ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, জয়পুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘনিয়া আলিম মাদ্রাসা, নূরানী মাদ্রাসাসহ আশপাশের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিত্যদিনকার স্কুলে আসা-যাওয়ার অন্যতম রাস্তা এটি। কিন্তু, সড়কটি কাঁচা হওয়ায় এ পথ ধরে চলাচল করতে তাদেরকে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়াও অসুস্থ বৃদ্ধদের ক্লিনিক-হাসপাতালে আনা নেয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে পথচারী ও স্থানীয়দের।

 

কাঁচা সড়কটি ধরে স্কুলগামী কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলছাত্রী মেহেরুন্নেসা জানায়, বৃষ্টির হলে এখান দিয়ে যেতে খুব সমস্যা হয়। মাটির রাস্তা হওয়ায় কাদাপানিতে ড্রেস নষ্ট হয়ে যায়। এই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে আমাদের জন্য অনেক সমস্যা হচ্ছে। সাহাদাত আরো এক শিক্ষার্থী জানায়, রাস্তায় সবসময় কাদা থাকে। জুতা হাতে নিয়ে আর প্যান্ট গুটিয়ে চলতে হয়। বৃষ্টি হলে সেদিন আর স্কুলে যেতে পারি না। স্কুলে না গেলে স্যাররা বকা দেয়।

 

সড়কের বেহাল দশায় নিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি হাসিম চৈয়াল ক্ষোভের সুরে প্রতিদিনের বাংলাদেশ জানান, বর্ষার সময় একটু বৃষ্টিতেই সড়কটি কাদা-পানিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল চলাচলও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পায়ে হেঁটে চলতেও কষ্টের শিকার হন এলাকাবাসী। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় গ্রামবাসী বাধ্য হয়ে কাদা-পানি মাড়িয়ে সড়কে চলাচল করেন।

 

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ নাগরিক আবুল কালামের অভিযোগ, স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত বহু আশা করে বসে আছি এই কাঁচা সড়কটি পাকা হবে। কিন্তু হবে হবে বলে এখনো হয়নি। বৃষ্টি হলে অনেক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আমরা ঘর থেকে বের হতে পারিনা।

 

সড়ক পথে চলাচলে এলাকাবাসীর এমন পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামবাসীর দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম তালুকদারের দাবী, আমি এই বিষয় একাধিকবার আমাদের পরিষদে বলছি। চেয়ারম্যান এসে দেখে গেছে। রাস্তা কয়েকবার মেপেও গেছে। এতকিছুর পরেও কেন হচ্ছে সেটা আমার বোধগম্য নয়।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির খান তাইফুর প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, রাস্তাটি অনেক পুরাতন। মানুষের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমি এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি পাকা করার জন্য মাননীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছি। এটি প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে।

 

এদিকে জয়পুরা এলাকার ওই কাঁচা সড়কটি কবে নাগাদ পাকাকরণ হবে জানতে চাইলে উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা সাজ্জাদ মামুন খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ওই স্থানে গিয়ে আমরা সড়কটি পরিদর্শন করে আসবো। উপজেলা ব্যাপী সড়ক গুলো সংস্কার করা এখন সময়ের দাবী। পর্যায়ক্রমে সব গুলো সড়ক সংস্কার করা হবে। তার দাবী, কিছু সড়ক টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বর্তমানে বৃষ্টি পরিস্থিতির কারণে একটু বিলম্ব হচ্ছে।

আরও পড়ুন