দখলে রামগতিতে খালের প্রাণ যায়যায়

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার রামগতিরহাট বাজারে স্থাপিত অফিসে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে কার্যক্রম চলে আসছে বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়ন ভূমি (তহশিল) অফিসের। সরকারি জমি দখলমুক্ত রাখা এ দুটি অফিসের দায়িত্ব হলেও মাত্র ৫০ মিটারের মধ্যে দখল হয়ে গেছে একটি সরকারি খাল। ‘রামগতি বাজার খাল’ নামক ওই খালটি স্থানীয় তিন শতাধিক প্রভাবশালী দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করায় অস্তিত্ব বিলীনের পথে। এতে করে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে পদক্ষেপ না নেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দশক আগে উপজেলার চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে চলা এ খাল দিয়ে পানি মেঘনা নদীতে প্রবাহিত হতো। কিন্তু খালটি বাজার সংলগ্ন হওয়ায় তিন যুগ আগে দখলদারদের কবলে পড়তে থাকে। খালটি দখল করে ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকশ দোকানঘর। ফলে জলাবদ্ধতায় ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খালের ওপর নির্মাণ করা দোকানঘরে জননী টেলিকম, বিসমিল্লাহ হোটেল, সৌদিয়া বস্ত্র বিতান, সুমাইয়া হোটেল, সোহেল ইলেক্ট্রনিক্স, মা ক্রোকারিজ, রফরফ স্টোর, অপরূপ হোন্ডা সার্ভিসিং সেন্টার ও মেঘনা স্টুডিওসহ প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এগুলো ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দখলদাররা। আর এ টাকার একটা অংশ স্থানীয় রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের পকেটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

 

স্থানীয় কৃষক মোস্তাফা, আবুল কালাম ও গোলাম রহমানসহ বেশ কয়েকজন জানান, একসময় এ অঞ্চলের কৃষকদের জমির পানি রামগতি বাজার খাল দিয়ে মেঘনা নদীতে যেত। কৃষিজমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র ভরসা ছিল এ খাল। খালটি দখল হয়ে যাওয়ায় বর্ষা এলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে খালটি পুনরুদ্ধারের দাবি তাদের।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন জনপ্রতিনিধি জানান, রামগতি বাজার খাল দখল করে নির্মাণ করা দোকানঘর থেকে মাসিক চাঁদা তোলা হয়। যার একটা অংশ স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসকে দেওয়া হয়। যার কারণে, তারা শুধু দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করেই কাজ শেষ করেন; উচ্ছেদে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেন না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল বাসেত নামের একজন জানান, ওই খালটি তাদের জায়গায় খনন করা হয়েছে। তাই দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। নাছির উদ্দিন ও মাঈন উদ্দিন নামের আরও দুজন জানান, তাদের দোকানের কিছু অংশ খালের ওপর পড়েছে। সরকার চাইলে খালের জায়গা ছেড়ে দেবেন। তবে এখন পর্যন্ত দখল ছেড়ে দিতে সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের নোটিস বা নির্দেশনা পাননি।

 বড়খেরী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, ‘এখানে নতুন এসেছি। শুনেছি রামগতি বাজার খাল দখল করে নিয়েছেন এমন তিন শতাধিক দখলদারকে চিহ্নিত করে উপজেলা ভূমি অফিসে তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। দখলদারদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা নেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়।’

রামগতি উপজলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমজাদ হোসেন বলেন, ‘রামগতি বাজার খাল দখলের বিষয়ে স্থানীয় ভূমি অফিসের মাধ্যমে খোঁজখবর নেওয়া হবে। খালটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম শান্তুনু চৌধুরী বলেন, ‘এসিল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা করে খালটি দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন