পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্ধারণ

তৈরি পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ হচ্ছে চলতি নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। বর্ধিত এ বেতন ডিসেম্বরের এক তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

বুধবার (১ নভেম্বর) মালিক-শ্রমিক ও নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সভা শেষে এ কথা জানান বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন তৈরি পোশাক মালিকদের প্রতিনিধি এবং বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, মকসুদ বেলাল সিদ্দিকি, শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনিসহ বোর্ডের সদস্যরা।

 

এর আগে ২২ অক্টোবর বোর্ডের কাছে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা করার প্রস্তাব দেয় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি। একই দিন শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাবের বিপরীতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি নূন্যতম মজুরি মাত্র দুই হাজার ৪০০ টাকা বাড়িয়ে ১০ হাজার ৪০০ টাকার প্রস্তাব দেয়। দুই পক্ষের প্রস্তাবের ওপরই আজ আলোচনা হয়। দীর্ঘ আলোচনা শেষে নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ করতে পারেনি কোনো পক্ষই। উভয় পক্ষই আরও সময় নেয়।

আলোচনা শেষে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা বলেন, আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল বেতনের ক্ষেত্রে ৭টি গ্রেড থেকে পাঁচটিতে নিয়ে আসা। এখানে মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষই একমত হয়েছেন। তবে নূন্যতম মজুরি নিয়ে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আরও একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় নির্ধারণ হবে নূন্যতম মজুরি। ওই দিনের সভায় বিজিএমইএ থেকে লিখিত আকারে প্রস্তাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর আগে বিজিএমইএ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সেখানে শ্রমিকদের দেওয়া প্রস্তাবের সঙ্গে অনেক ব্যবধান। আশা করছি এটা কমে আসবে।

বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রস্তাবে সব সময় কিছুটা পার্থক্য থাকে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা ও শিল্প-উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট সামনে রেখে আমরা এ প্রস্তাবনা করেছিলাম গত সভায়। সব কিছু বিবেচনা করে মজুরি বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা বৃদ্ধি করবো। আগামী সভায় লিখিত আকারে আমরা বোর্ডের কাছে উপস্থাপন করবো। আমরা যদি এখান থেকে সিদ্ধান্ত না নিতে পারি তাহলে প্রধানমন্ত্রী আছেন। উনি শ্রমিকবান্ধব, আশা করছি সমাধান আসবে। একটা ভালো বেতন পাবেন আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনেরা।

শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাদের এখনো নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ হয়নি। এর সঙ্গে শ্রমিক অসন্তোষ হওয়ার কথা না। এর পেছনে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। আমাদের সাধারণ শ্রমিকরা কোনো প্রকার ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত না। তবুও আমি সব শ্রমিকদের প্রতি অনুরোধ জানাই, আপনারা ফিরে যান, কাজে যোগদান করুন।

নূন্যতম মজুরি নিয়ে শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনদের অবস্থা দেখতে হবে। একই সঙ্গে শিল্পের অবস্থাটাও দেখতে হবে। এই দুই জায়গাতে সমন্বয় করেই নির্ধারণ হবে বেতন। মালিকরাও দেখবেন- শ্রমিক তার কারখানায় কাজ করবেন, উৎপাদন করবেন। সেখান থেকে এই শ্রমিককে কতো বেতন দিলে তার উৎপাদন আরও বাড়বে, পোশাকের মান ভালো হবে, শ্রমিকের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। জীবন নিরাপদে থাকবে সেসব বিষয় মালিকদের বিবেচনায় থাকতে হবে। আমি মনে করি মালিকদের মধ্যে অনেক মানবিক মানুষ আছেন তারা এগিয়ে আসবেন। পাঁচ বছরের জন্য মজুরি বৃদ্ধি হয়। তাই আগামী পাঁচটা বছর যেন তারা স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার নিয়ে থাকতে পারেন সে বিষয় বিবেচনায় নেবেন বলে আশা করি।

 

আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যৌক্তিক শ্রমিক আন্দোলনকে সমর্থন করি। কিন্তু কোনো ভাঙচুর-বিশৃঙ্খলাকে সমর্থন করি না। সাম্প্রতিক আন্দোলনে অন্য কোনো পক্ষের ইন্ধন থাকতে পারে। আমার শ্রমিক ভাই-বোনেরা কারখানা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত না।

এর আগে সাধারণ শ্রমিকদের পক্ষে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বিবেচনায় এনে মজুরি ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেই প্রস্তাবও লিখিত আকারে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কাছে জমা হয়।

আর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) শ্রমিকদের জীবন-মান মূল্যায়ন করে ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার ৫৬৫ টাকা করার প্রস্তাব দেয়।

আরও পড়ুন