ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে বাতাসের গতি ও বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় চাঁদপুরে আধাপকা ও পাকা আমন ধানসহ ৬১০ হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যার ফলে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদরের বাগাদী ইউনিয়নের ছোবহানপুর, বাগাদী গ্রাম, নানুপুর, বালিয়া ইউনিয়নের সাপদি, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সকদি রামপুর ও আশাপাশের এলাকায় গিয়ে আমন ধানের অধিকাংশ জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
ছোবহানপুর ও বাগাদী গ্রামের জমিগুলোতে কৃষকরা পাকা ধান দুদিন আগে কেটে জমিতে শুকানোর জন্য রেখেছেন। সেবসব জমিতে এখন হাটু সমান পানি। অনেক জমির পাকা ও আধাপকা ধান বাতাসে নুয়ে পড়েছে। এসব এলাকার খাল ও নালা ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেই।
ছোবহানপুর মাঠে দুদিন আগে কেটে রাখা ধান পানি থেকে তুলে আনছেন কৃষক মো. হাবিব। তিনি জানান, এ বছর পৌনে ৩ একর জমতি আমন ধানের আবাদ করেছেন তিনি। অধিকাংশ জমি এখন পানির নীচে। প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন কি করবেন তিনি বুঝতে পারছেন না।
বাগাদী মাঠের কৃষক হাবিব বেপারী ও ওবাদ শেখ জানান, তাদের পুরো মাঠের অধিকাংশ জমির ধান হাটু সমান পানির নীচে। অনেকেই ধান কেটে শুকানোর জন্য দু’তিন দিন আগে রেখেছেন। চিন্তাও করতে পারেননি ঘূর্ণিঝড়ে এমন ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের কৃষক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সকদিরামপুর মাঠে তার দেড় একর জমিতে বিআর-৪৯, বিনা-৭ ও ১৭ ধানের আবাদ করেছি। আগে কেটে রাখা ধান শ্রমিক নিয়ে তুলছেন। পানিতে ভিজে যাওয়ার কারণে ওজন বেড়ে গেছে।’
ওই এলাকার আরেক কৃষক আব্দুল খালেক বেপারী কান্নাজড়িত কন্ঠে বরেণ, ‘আমার সব শেষ। প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে এক একর জমিতে বিআর-২২ জাতের ধানের আবাদ করেছি। এই ধানগুলো উচ্চতায় অনেক বড়। যার ফলে ঘুর্ণিঝড়ে বাতাসের তীব্রতায় সব ধান জমিতে নুয়ে পড়েছে। এবছর বড় ধরণের লোকসানে পড়তে হবে। আমি সরকারের কাছে সহায়তা কামনা করছি।’
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ র প্রভাবে জেলায় আধাপাকা ও পাকা রোপা আমান ১৯০ হেক্টর, সরিষা ১৪০ হেক্টর, আগাম শীতকালীন সব্জি ২৭০ হেক্টর ও বীজতলা (ধান) ১০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন। জরিপ কার্যক্রম শেষ হলে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানা যাবে।’