লক্ষ্মীপুরে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধে সভা

প্রতিনিধি: কোটা বাতিল আন্দোলন নামে দেশব্যাপি সন্ত্রাস, নাশকতা ও সহিংতা প্রতিরোধে জেলায় করণীয় বিষয়ক জনপ্রতিধিদের নিয়ে সভা ২৯ জুলাই (সোমবার) সকালে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান এর সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মেহের নিগার এর পরিচালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড: নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) সংসদ সদস্য মো: আবদুুল্লাহ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ,জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শাহজাহান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হক।
এসময় বক্তব রাখেন এনএসআই পরিচালক বশির আহমেদ, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া,রায়পুর পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট, রামগতি পৌরসভার মেয়র মেসবাহ উদ্দিন, রামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারী, রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ,রায়পুর উপজেলা চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ, রামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো: ইমতিয়াজ আরাফাত, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আরিফুর রহমান, লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হোসাইন আহমদ হেলাল। এসময় বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সভায় রামগতি পৌরসভার মেয়র মেসবাহ উদ্দিন মেজু জানান, ঢাকাসহ সারাদেশে কোটা আন্দোলন নামে নাশকতা ও হামলা ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিযোগে কারা অর্থায়ন করেছে তা খুজে বের করা দরকার। তিনি বলেন, রামগতির বিভিন্ন স্থানে কোট নামে মিছিল মিটিং হয়েছে কে কে ছাত্রদের ইন্ধন দিয়েছে অর্থ দিয়েছে তা খুজে বের করার জন্য আমি প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানাই। এটা কোটা আন্দোলন নয় এটা আওয়ামীলীগ কে আঘাত করার আন্দোলন ছিল। যারা এসব আন্দোলন করার নামে ঢাকায় গিয়ে হামলা ও নাশকতা করেছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তবে নিরঅপরাধ কোন মানুষকে হয়রানি করা যাবেনা।
রায়পুর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ বলেন, রায়পুরে কোটা আন্দোলন নামে কাজী ফারুকী স্কুল এন্ড কলেজ ও জোনাকী নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা আন্দোলন করেছে এতে ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা ইন্ধন দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার।
রামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারী বলেন, বিভিন্ন স্থানের মতো রামগঞ্জে কোটা আন্দোলন করা হয়েছে। তবে যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে সেই সব প্রতিষ্ঠানে আমরা পরিচালনা কমিটি আছি। তিনি বলেন কোটা আন্দোলন নামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করা হয়েছে। তিনি বলেন কোটা নামে আওয়ামীলীগ কে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে আওয়ামীলীগ এতো দুর্বল নয় ধাক্কা দিলে পড়ে যাবে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন, আন্দোলন নামে মূলত ঢাকায় নাশকতা পরিকল্পনা ছিল তাদের। লক্ষ্মীপুর থেকে কিছু সন্ত্রাসী ঢাকায় এসব হামলা ও অগ্নিসংযোগ ঘটনার জড়িত ছিল এরা এখনো ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অলিগলিতে অবস্থান করছে এদের গ্রেফতার করা দরকার। তিনি বলেন লক্ষ্মীপুর মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে যে সকল ছাত্র এদের অধিকাংশ তালিকা করা করে তাদের অভিভাবক ও ছাত্রদের বুুঝিয়ে আন্দোলন থেকে বিরত থাকার জন্য আমি কাজ করেছি।
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআই উপপরিচালক বশির আহমেদ বলেন, লক্ষ্মীপুরের অনেক জনপ্রতিনিধি সন্তানেরা কোটা আন্দোলনের নামে ফেইসবুকে উসকানিমূলক পোষ্ট দিয়েছে এমন কিছু তথ্য আমাদের কাছে আছে। জেলা কে শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য আমরা প্রশাসনের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। লক্ষ্মীপুর ভাল রাখতে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতা দরকার তা হলে আরোও থাকবে জেলা।
লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সকলের সহযোগীতায় লক্ষ্মীপুর শান্ত ছিল। এ ধরনের সভা অবশ্যই সমউপযোগী।
দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি বিরোধী কোন কর্মকান্ড যাতে না হয় সেই জন্য কাজ করে পুলিশ। সবাই মিলে কাজ করলে চ্যালঞ্চ মোকাবেলা সম্ভব হবে। কোটা আন্দোলন নামে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত হলেও তারা মাঠে ছেড়ে যায়নি সকলের সহযোগীতা পেলে তাদের মোকাবেলা করতে পারবো।
সঠিক তথ্য দিয়ে পুলিশ কে অপরাধীদের ব্যাপারে সহযোগীতা করার জন্য তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি আহবান জানান। এ ছাড়া সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারী কাউকে গ্রেফতার করলে কোন ধরনের তদবির বা সুপারিশ না করার জন্য তিনি জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহবান জানান।
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, যার যার অবস্থান থেকে সন্ত্রাস ও নাশকতা রোধে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক এলাকায় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগীতায় জনগণকে নিয়ে জনসচেতনতামূলক সভার আয়োজন করতে হবে।এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে সন্ত্রাসী ও নাশকতা প্রতিরোধে কমিটি সেই গুলো সক্রিয় করে সভার আয়োজন করা হবে।
রামগতি ও কমলনগর আসনের সংসদ সদস্য মো: আবদুল্লাহ জানান, কোটা আন্দোলন নামে দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড ধ্বংস করা হয়। কোটার নামে দেশকে নস্যাৎ করার জন্য সন্ত্রাসীরা এক হয়ে কাজ করে। এরা সংখ্যা কম কিন্তু তাড়াতাড়ি একত্রিত হয়। তারা দেশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করেনা । তাদের বিরুদ্ধে সর্তক থাকতে হবে। পুনরায় যাতে করে কোন ধরনের নাশকতা করতে না পারে।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন,সকলের সহযোগীতায় লক্ষ্মীপুর জেলা ভাল আছে। এটা সুফল সবার। জেলার উন্নয়ন শান্তি রক্ষায় এবং আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন। সবাই মিলে কাজ করে রেজাল্ট আনতে হবে। কোটা আন্দোলন শুরুতে রাজনৈতিক ছিলনা। পরে ছাত্রদের হাইজ্যাক করে অর্থ দিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। কোটা আন্দোলন নামে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে । সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলা চালিয়ে সম্পদ ধ্বংস করেছে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গঠন করে উন্নয়ন। লক্ষ্মীপুর জেলাকে শান্ত রাখতে সব পেশার মানুষ আন্তরিক ভাবে কাজ করার আহবান জানান।
লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুরের অনেক সন্ত্রাসী ঢাকায় গিয়ে কোটা আন্দোলন নামে নাশকতা করেছে। সন্ত্রাসীরা যাতে করে আবার মাথা ছাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দেশটা আমাদের সবার দেশের সম্পদ নষ্ট করার কারো অধিকার নেই। মেন্ট্রোরেল, ফ্লাইওভার এ গুলো জ্বালিয়ে পৃুড়িয়ে নষ্ট করেছে সন্ত্রাসীরা ফলে সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে। নাশকতা করে জঙ্গীরা ক্ষমতায় আসতে চায়।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিন প্রশাসনকে সহযোগীতা করেন। আইনের গতিতে সকলে সমান। আওয়ামীলীগ মাঠ ছাড়ার দল নয় যে কোন ধরনের ষড়ষন্ত্র মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত আছে। লক্ষ্মীপুরে যাকে কোন কোন ধরনের নাশকতা কেউ করতে না পারে সেই দিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি সবাই দৃষ্টি রাখেন কেউ যেন কোন ক্ষতি না করতে পারে।

আরও পড়ুন