লক্ষ্মীপুরে বন্যার প্রভাবে ডায়রিয়া ও চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু সদর হাসপাতালেই চর্মরোগের ১৭২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া জেলার বিভিন্নস্থানের বেসরকারি অন্তত ১০টি হাসপাতালে চর্মরোগের আরো ২০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এদিকে গত ১২ দিনে লক্ষ্মীপুরে অন্তত এক হাজার মানুষ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
এরমধ্যে ৭৮৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় পানিতে ডুবে ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩ জন মারা গেছেন।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সদর হাসপাতাল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২২ আগস্ট থেকে লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৭৮৮ জন, শ্বাসতন্ত্র সংক্রমণে (আরটিআই) ৩৪ জন, সাপের কামড়ে ১৫৬ জন, চর্মরোগে ১৭২ জন, পানিতে ডুবে ২ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এছাড়া সদর ও রায়পুর উপজেলায় পানিতে ডুবে ২ জন এবং রামগঞ্জে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একজন মারা গেছেন। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী, শ্বাসতন্ত্র সংক্রমণে ২ জন, সাপের কামড়ে ১০ জন, পানিতে ডুবে ১ জন, চর্মরোগে ১৭২ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৬০ জন ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর মধ্যে রায়পুরে ৪, রামগঞ্জে ৩, কমলনগরে ২১, রামগতিতে ২১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সাপে কাটা রোগীদের মধ্যে সদরে ৭ জন ও রায়পুরে ৩ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
চর্মরোগে সদর হাসপাতালেই ১৭২ জন চিকিৎসা নেন। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যা কবলিত হয়ে কোনো মৃত্যুর ঘটনা নেই। উত্তর দূর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা সিরাজ উল্যা বলেন, মাছ-সাপসহ বিভিন্ন জীবজন্তু মরে পচে গিয়ে তা পানিতে মিশে গেছে। এছাড়া টয়লেটের ময়লাও একাকার হচ্ছে। সবমিলিয়ে দূষিত পানি ভেঙে প্রতিদিন চলাফেরা করতে হয়।
এসব পচা পানির কারণে পা ক্ষত হয়ে যাচ্ছে। চুলকানি বেড়ে অনেকের শরীরেই ফসকা দেখা দিচ্ছে। লক্ষ্মীপুর প্রাইভেট হসপিটাল-ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজু হাসান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চর্মরোগে আক্রান্ত অন্তত ২০০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া আমরা গত তিনদিন ধরে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প করে বন্যার্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আজ সোমবার খিলবাইছা মাদরাসা এলাকায় আয়োজিত ক্যাম্প থেকে ৪০ জনকে বিনামূল্যে চুলকানি মলম দেওয়া হয়েছে।
১০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বলেন, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৯৩ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এরমধ্যে ৫১ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। তবে অধিকাংশই শিশু। এছাড়া চর্ম-আরটিআইসহ বিভিন্ন রোগে প্রতিদিন বহির্বিভাগে প্রায় ১ হাজার রোগী চিকিৎসা নেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, বন্যা কবলিতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ৬৪ টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প করে বন্যার্তদের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। বন্যার্তদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।