লক্ষ্মীপুরে মাটি দিয়ে কালভার্টের মুখ ভরাট, জলাবদ্ধতার শঙ্কা

লক্ষ্মীপুরের রামগতির চর রমিজে একটি কালভার্টের মুখ বন্ধ করে জমিতে মাটি ভরাট করেছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। এতে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।

এ বিষয়ে প্রতিকার পেতে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ইউএনও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আবদুল্যা। তিনি চর রমিজ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজনকে মামলা দিয়ে হয়রানিরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কালভার্ট দিয়ে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন না হলে ওই এলাকার আড়াই থেকে তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হবে। এছাড়া প্রায় দুই শতাধিক পরিবার জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে।

স্থানীয় লোকজন ও কৃষকরা জানান, রামগতি উপজেলার চর রমিজ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চর রমিজ গ্রামের মোল্লাপাড়া বাজার সংলগ্ন বিবিরহাট থেকে রশিদিয়া রাস্তার ওপর প্রায় ২০ বছর আগে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। ওই কালভার্টের নিচ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ এলাকার পানি নিষ্কাশন হতো। কালভার্ট নির্মাণের আগেও ওইস্থান দিয়ে খালের দিকে পানি নেমে যেত। গেল বর্ষা মৌসুমে কালভার্টের মুখে মাটি দিয়ে বাঁধ দেন মোহাম্মদ আবদুল্যা। সম্প্রতি সিত্রাংয়ের সময় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সেসময় তলিয়ে যায় প্রায় দুইশ একর ফসলি জমি।

ক্ষতিগ্রস্তরা বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অবহিত করে বাঁধটি কেটে দেন। এতে আটকে পড়া পানিগুলো নেমে যায়। এক সপ্তাহ আগে পুনরায় কালভার্টের মুখ বন্ধ করে মাটি ভরাট করেন আবদুল্যা।

এতে স্থানীয় লোকজন এবং কৃষকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। আসছে বর্ষা মৌসুমে পুনরায় জলাবদ্ধতাসহ ফসলহানির শঙ্কা করছেন তারা। প্রতিকার পেতে গত ১৯ জানুয়ারি গ্রামবাসীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

চর রমিজ ইউনিয়ন যুবলীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও ভুক্তভোগী সুজন মোল্লা বলেন, কালভার্টের মুখ বন্ধ থাকায় সিত্রাংয়ের সময় অতিবৃষ্টির পানি জমে আমাদের এলাকার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা জলাবদ্ধতায় আটকে ছিলাম। পরে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে বাঁধটি কেটে দিলে পানি নেমে যায়। পানির কবল থেকে রক্ষা পেলেও মামলার কবলে পড়ি। আবদুল্যা আমাদের নয়জনের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা মামলা করেন। এতে নয়জনের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ওই মামলায় আমরা আদালত থেকে জামিন পাই।

তিনি আরও বলেন, আবদুল্যা এখন আবার কালভার্টের মুখ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে আমরা জলাবদ্ধতাসহ ফসলহানির শঙ্কায় রয়েছি। সরকার দেশে ফসল উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে, আর তিনি আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে ফসলহানির ব্যবস্থা করেছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আবদুল্যা বলেন, কালভার্টের মুখে আমার বসতবাড়ি। আমার জমির ওপর আমি মাটি ভরাট করেছি। অন্য কোনো স্থান দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হোক।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামগতির চর রমিজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাহিদুল ইসলাম দিদার বলেন, পানি নিষ্কাশনকে কেন্দ্র করে জমির মালিক মোহাম্মদ আবদুল্যার সঙ্গে এলাকার কয়েকজনের ঝামেলা হয়েছে। এ নিয়ে হামলা এবং মামলাও হয়েছে। এলাকাবাসী ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ইউএনও মহোদয় আমাকে জানিয়েছেন। জমির নিচ দিয়ে পাইপ বা অন্য কোনো উপায়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যাবস্থা করা হবে।

আরও পড়ুন