লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেশিন ডাক্তার নামে পরিচিত আবু তাহের সিদ্দিকের অপচিকিৎসায় মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছে মানুষ। গ্রামের সহজ-সরল
মানুষের অর্থ লুটে নিচ্ছে হাতুড়ে এই চিকিৎসক।
তার চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই ভারসাম্যহীন হয়ে আতঙ্কে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ছেড়ে দিয়েছে। তবে এটি বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা বলে দাবি করেন সিদ্দিক। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দাবি, একটি ভাঁওতাবাজি ও অপচিকিৎসা।
সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে চরআবাবিল ইউপির (বাসাবাড়ী-হায়দরগঞ্জ সড়ক) দক্ষিণ উদমারা গ্রামের হাজী স্টেশান এলাকায় হাজী মেডিকেল হলে বসেন এই হাতুড়ে ডাক্তার। এই মেডিকেল হলের মালিক তিনি। এখনে তিনি বিশেষ একটি মেশিন দিয়ে মধ্যবয়সী নারী, বৃদ্ধ ও যুবককে চিকিৎসা ও ওষুধ দিচ্ছেন। ওই মেশিনে শরীরের ৮০ প্রকার বাত, মেহপ্রমেহ, গ্যাস্টিক, আলসার, মাজায়-কোমড়ে ব্যথা, বুক ধরফর, ডায়াবেটিস ও যৌন সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাদানসহ গ্যারান্টি দিয়ে এন্টিবায়োটিক ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। এতে প্রেসক্রিপশন বাবদ ২’শ টাকা দিতে হয় তাকে। ওষুধগুলো তার দোকান থেকে নিতে হচেছ রোগীদের।
আবু তাহের সিদ্দিকীর চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার চরকাছিয়া গ্রামের রুবী বেগম জানান, হাজি মেডিকেলে তার কোমড়ের ব্যথার জন্য গেলে সিদ্দিক তাকে কোনো পরীক্ষা না দিয়েই মেশিন ধরে প্রেসক্রিপশন লিখে কয়েক হাজার টাকার ওষুধ লিখে দেন এবং এই ওষুধগুলো তার দোকান থেকে কিনতে বলেন। আমি অন্যের কথায় এখান এসে আবাক কাণ্ড দেখলাম।
মান্দারি বাজার থেকে আসা মনির হোসেন জানান, একমাস আগে আমার হাতের রগ মোটা হয়ে যন্ত্রণা করে। কিন্তু এই ডাক্তার আমার হাতে- বুকে কয়েকটি মেশিন দিয়ে দেখে আমার আলছার হয়েছে বলে একমাস আগে এন্টিবায়োটিকসহ ১২ হাজার টাকার ওষুধ লিখে দেয়। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। ওই ওষুধ সেবনে রোগ ভালো না হয়ে উল্টো আমি ভারসাম্যহীন হয়ে হতাশায় আছি। তাই আজকে আবার আসার পর তিনি আরও ১২ হাজার টাকার ওধুষ লাগবে বলে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অভিযোগ, মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতেই এসব করছে হাতুড়ে ডাক্তার আবু তাহের সিদ্দিক।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আবু তাহের সিদ্দিকি বলেন, রোগী দেখা প্রেসক্রিপশন দেওয়ার জন্য আমার কয়েকটি প্রশিক্ষণ রয়েছে। প্রেসক্রিপশন রোগীর কী রোগ তা লেখার প্রয়োজন হয় না। একটি প্যাডে পদবি ডিএমস লিখেন ২’শ টাকা নিয়ে এন্টিবায়োটিকসহ ১০-১২ হাজার টাকার ওষুধ কেন দিচ্ছেন এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি। তবে এটা বলেন, রোগীরা আসেন, তাই চিকিৎসা দিয়ে থাকি। আমিও বর্তমানে অসুস্থ আছি, পরে কথা বলব।
এ ব্যাপারে রঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বাহারুল আলম বলেন, এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পূর্বেও একই ধরনের অভিযোগ শুনেছি। রাস্তার পাশের হাতুরে চিকিৎসা শরীরের মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। অসাধু হাতুরে ডাক্তারদের বিভিন্ন রোগের পরামর্শে চোখ, চর্ম রোগ বা ক্যান্সারসহ নানাজটিল রোগ হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিভিল প্রশাসনসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যকে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।