নিজস্ব সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনা নদীতে ইলিশ কমে যাওয়ার কারণে উপকূলীয় এই এলাকায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ভরা মৌসুমে ইলিশ ধরা না পড়ায় মৎস্য শ্রমিক, আড়তদার, পাইকার, দাদন ব্যবসায়ী ও জেলে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে বিষাদের ছাপ।
জানা গেছে, রামগতিতে নিবন্ধিত জেলে ২০ হাজার। চলতি অর্থবছরে নদী থেকে ইলিশ আহরণ করা হয়েছে ৫ হাজার ১৬৫ টন, যা বিগত বছরের তুলনায় অনেক কম।
মো. ফেরদৌস রামগতি মাছ ঘাটের আড়তদার। তিনি বলেন, রামগতির মেঘনা নদীতে ইলিশ কমে গেছে ৬০-৭০ শতাংশ। ফলে এই এলাকার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এখন ব্যাংক ঋণ নিয়ে চলতে হচ্ছে।
নৌকার মালিক লিটন বেপারি বলেন, মেঘনা নদীতে ইলিশ আশানুরূপ না পাওয়ায় জেলেরা ৬০-৬৫ কিলোমিটার দূরে সাগরে গিয়ে মাছ শিকার করছেন। সাগর থেকে ইলিশ এনে চাহিদা মেটাচ্ছেন জেলেরা। ইলিশের এমন অভাবে ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
রামগতি সীমানায় ছোট-বড় ৬টি ডুবোচর রয়েছে বলে জানিয়েছেন রইজল মাঝি। তিনি বলেন, ওই ডুবোচরগুলো বর্ষা মৌসুমে দেখা না গেলেও শীতে দেখা যায়। এসব ডুবোচর ও সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে মেঘনায় ইলিশ আসছে না।
মেঘনাপাড়ের বাসিন্দা মানজুরুল ইসলাম জানান, কিছু অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধন ও চিংড়ি রেণু শিকার করায় এমন আকাল চলছে।
রামগতি বাজারটি নদীর ওপর নির্ভরশীল বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী মো. আরজু আমিন। তিনি বলেন, ‘নদীতে মাছ না থাকায় আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ যাচ্ছে।’
জেলে ইন্দ্রিস মিয়া বলেন, ‘ভরা মৌসুমে ইলিশ ধরা না পড়ায় আমাদের পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে অভাব। দাদন আর এনজিওর ঋণই এখন আমাদের একমাত্র ভরসা।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোডেক চরগাজী শাখার ব্যবস্থাপক মো. কামাল উদ্দিনের ভাষ্য, নদীতে মাছ না থাকায় এ অঞ্চলে অভাব চলছে। এ কারণে তাদের ঋণের গ্রাহক বাড়ছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, নদীতে আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেদের জীবিকা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, জলবায়ু পরিবর্তন, নদীতে সৃষ্ট বহু ডুবোচরের কারণে ইলিশ মিঠাপানিতে আসতে বাধা পেয়ে গতিপথ পরিবর্তন করছে। ফলে আশানুরূপ ইলিশ আসছে না। নদীতে ইলিশ এলে এ অঞ্চলের অভাবও দূর হয়ে যাবে।