লক্ষ্মীপুরে পাউবোর জমি বেদখল, বৃক্ষ রোপণ করতে গিয়ে মারধরের শিকার কর্মকর্তা

নিজস্ব সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩ একর জমি ১৮টি পরিবার বেদখল করে রেখেছে। এরমধ্যে অধিকাংশই প্রভাবশালী মীর মোহাম্মদ এলিটের দখলে রয়েছে। ওই জমিতে গাছের চারা রোপণ করতে গেলে পাউবোর রামগতি উপ বিভাগীয় কার্যালয়ের কার্যসহকারী আরিফুর রহমান ভূঁইয়াকে এলিট মারধর করেন। এরপর থেকেই কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আ ম ম নঈম ও আরিফুর সেখানে যেতে ভয় পাচ্ছেন।

আজ রবিবার জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় পাউবোর ৭ একর ৭৮ শতাংশ জমি রয়েছে। এরমধ্যে ৩ একর জমি বেদখল রয়েছে। পাউবোর কার্যালয় এলাকায় ঘর নির্মাণ করে ১৮টি পরিবার বসবাস করছে।

তিনবার তাদেরকে নোটিশ দেওয়া হলেও তারা দখল ছাড়েনি। এরমধ্যে এলিট পাউবোর জমিকে নিজেদের বলে দাবি করছেন।
পাউবো সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় পাউবো কর্মকর্তা আরিফুর রহমান গাছের চারা রোপণ করতে যান। এসময় দখলদার এলিট তাকে মারধর করেন।

এ ঘটনায় ওইদিন আরিফুর তার বিরুদ্ধে রামগতি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ঘটনাটি রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম শান্তুনু চৌধুরীকেও জানানো হয়েছে।
অভিযুক্ত এলিট রামগতি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারার রামগতি উপজেলা কমিটির সহসভাপতি মর্জিনার বেগমের ছেলে। প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) এমএ মান্নান বিকল্পধারার মহাসচিব।

পাউবোর জমিতে বসবাসরত মো. রাব্বি, কবির হোসেন ও আলাউদ্দিন জানান, নদী ভাঙনে সব হারিয়ে ১৩ বছর ধরে ২৩টি পরিবার পাউবোর জমিতে ঘর বাঁধে।

এখন ১৮টি পরিবার রয়েছে। এ স্থান থেকে সরে যাওয়ার জন্য পাউবো কয়েকবার তাদেরকে নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু নিঃস্ব হওয়ায় তারা কোথাও যেতে পারছেন না। পাউবোর জমিতে থাকা একটি পুকুরে এলিট মাছ চাষ করছেন। খালি জমিতে কলাসহ বিভিন্ন গাছ লাগিয়েছেন।
এলিটদের স্বজন পরিচয়ে মো. জাহের বলেন, ‘৫ ফুট পর পর গাছ রোপণ করলে মাঝখানে এলিট পেঁপে গাছ লাগাবেন বলে পাউবোর কর্মচারীকে জানিয়েছেন। কারণ তিনি চেয়েছিলেন পাউবোর লাগানো গাছগুলো দেখাশোনা করতে। যেন কেউ নষ্ট না করে।’

পাউবোর রামগতি উপজেলার কার্যালয়ের কার্য সহকারী আরিফুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমি গাছের ছাড়া রোপণ করতে গিয়েছি। এতে এলিট আমাকে বাধা দেন। একপর্যায়ে তিনি আমাকে ধাক্কা, কিল-ঘুষি মেরে গেঞ্জি ছিঁড়ে ফেলেন। এ ঘটনায় রামগতি থানায় জিডি করেছি।’

রামগতি পাউবোর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আ ম ম নঈম এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ভয়ে তিনি এলিটের বিরুদ্ধে কথা বলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে মীর মোহাম্মদ এলিট বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পাউবোর জমির পুকুরে মাছ চাষ ও খালি জমিতে গাছপালা লাগিয়ে ব্যবহার করে আসছি। সেখানে আমাদের গাছপালা কেটে তার বৃক্ষরোপণ করতে আসে। আমি তাদেরকে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু না মানায় কাটাকাটি হয়েছে। আমি কাউকে মারিনি। এখন মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।’

রামগতি থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, ‘এ ঘটনায় জিডি করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনা দুঃখজনক। পাউবোর কার্যালয় এলাকায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর হস্তক্ষেপ দরকার।’

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম শান্তুনু চৌধুরী বলেন, ‘পাউবোর কর্মকর্তারা ঘটনাটি আমাকে জানিয়েছেন। তাদেরকে আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।’

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘পাউবোর জমি নিজের দাবি করে এলিট দখল করে রেখেছেন। ওই জমিতে গাছ লাগাতে গেলে কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভয়ে রয়েছেন। তারা কার্যালয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন।’

আরও পড়ুন