তিনি তিনবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু এখন সংসার চালাতে কাপড় ইস্ত্রির কাজ করছেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আবার প্রতিদিনেই ছুটে যান মানুষের সেবা করতে। নেত্রকোনার মদন উপজেলার চানগাও ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এখলাছ মিয়ার গল্পটা এমনই।
মদন উপজেলা পরিষদের ফটকের বিপরীতে এখলাছ মিয়া একটি ছোট দোকানে ইস্ত্রির কাজ করছেন দুই যুগের বেশি সময় ধরে। তার এমন কর্মকাণ্ড বর্তমান সমাজে সততার এক দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
চানগাও ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুরাফ আলীর ছেলে এখলাছ মিয়া। দরিদ্র পরিবারের হাল ধরতে ৩৫ বছর আগেই কাপড় ইস্ত্রির কাজ শুরু করেন।
তখন থেকেই এলাকার দরিদ্র মানুষের সেবা করার জন্য জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছে জাগে। ২০০৩ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এখলাছ মিয়া প্রথম ইউপি সদস্য হিসাবে বিজয়ী হন। নির্বাচিত হয়েও বাদ দেননি কাপড় ইস্ত্রির কাজ। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি তার ওয়ার্ডের লোকজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা প্রদান করেন।
২০১১ সালে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। কিন্তু এতেও তিনি হাল ছাড়েনি। ২০১৬ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয় লাভ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালেও তিনি তৃতীয়বারের মতো ইউপি সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন।
স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার পরিবার।
একমাত্র মেয়ে ফারজানা আক্তার এ বছর মদন সরকারি হাজী আব্দুল আজিজ খান ডিগ্রি কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বড় ছেলে শরীফ ২০২৩ সালে জাহাঙ্গীরপুর টি আমিন সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছে। ছোট ছেলে আরিফ একই বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ছে। সংসারের খরচ ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে এখন তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু স্ত্রী ও সন্তানদের অনুপ্রেরণায় মানুষের সেবা করতে পিছুটান নেই এখলাছ মিয়ার।
এখলাছ মিয়ার স্ত্রী ইসরাত জাহান পান্না বলেন, মানুষের সেবা করে আমার স্বামী তিনবার মেম্বার হয়েছে। শুধু অর্থ-সম্পদ দিয়ে নয়, মানুষের সেবা করলে সম্মান পাওয়া যায় সেটা আমার স্বামী প্রমাণ করেছে। অভাব অনটনে সংসার চললেও আমাদের কোনো আক্ষেপ নেই। আমার স্বামী যেন সারা জীবন মানুষের সেবা করতে পারে সে জন্য উৎসাহিত করি।
ইউপি সদস্য এখলাছ মিয়া বলেন, জনসাধারণকে সেবা দিয়ে তিনবার ইউপি সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছি। সংসারের খচর ও ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে ৩০ বছর ধরে ইস্ত্রির কাজ করছি। প্রতিদিন এ কাজ করে ৩০০-৪০০ টাকা আয় করি। সরকার থেকে প্রতিমাসে তিন হাজার ৬০০ টাকা ভাতা পাচ্ছি। এতে কোনরকম আমার সংসার চলছে। কিন্তু আমি মানুষের সেবা করতে চাই। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন মানুষের সেবা করে যাবো।
চানগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল আলম তালুকদার বলেন, চানগাও ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান আমি। আমার সাথে তিনবারেই ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এখলাছ মিয়া নির্বাচিত হয়েছে। পরিষদের বরাদ্দ অনুযায়ী ৯ নম্বর ওয়ার্ডে যা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে বিতরণ করেছেন তিনি। এখলাছের কার্যক্রমে ওই ওয়ার্ডের মানুষ সন্তুষ্ট। কিন্তু কাপড় ইস্ত্রি করে সংসার চালায় সে। দারিদ্রের মধ্যে থেকেও নিঃস্বার্থভাবে জনপ্রতিনিধিত্বের সততার দৃষ্টান্ত এখলাছ মেম্বার।