নিজস্ব সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ পিপিএম বলেছেন, অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। এটাই আমাদের নীতি। অপরাধীর গায়ে পুলিশের আঁচড় লাগতেই হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আঁচড় না লাগবে, অপরাধী কিন্তু তৎক্ষণ পর্যন্ত মনের আনন্দে অপরাধকর্ম করে যাবে। এটি হতে দেওয়া যাবে না। জেলা পুলিশের লক্ষ্য অনুযায়ী লক্ষ্মীপুরবাসী যেন জানমালের নিরাপত্তাসহ বসবাস করতে পারে আমরা সেভাবে কাজ করে যাবো।
বুধবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় মিলনায়তনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দুটি হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও একটি দেশীয় রিভলবার উদ্ধারের ঘটনায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসপি জানান, ১৪ সেপ্টেম্বর রামগঞ্জে চোখে মরিচের গুড়ো ছিটিয়ে অটোরিকশা ছিনতাইকালে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিপন হোসেন নামে একজনের মৃত্যু হয়। ঘটনাটি তদন্তকালে রামগঞ্জ ও রায়পুরের বিভিন্ন এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের নাম উঠে আসে। তদন্তেপ্রাপ্ত মো. জসিম (৪০) নামে একজনকে ঢাকার কোতয়ালী থানা এলাকা থেকে সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে ১৭ সেপ্টেম্বর দায়েরকৃত ছিনতাই ও রিপন হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় তিনি ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানায়। তাদের একটি ছিনতাইকারী দল রয়েছে বলেও তথ্য দেন তিনি। ঢাকা-রায়পুর-ফরিদগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে রামগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি একটি অস্ত্রের সন্ধান দেয়। সেই তথ্য অনুযায়ী বুধবার দুপুর ১ টার দিকে তার বসতঘর থেকে একটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।
অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার জসিম রামগঞ্জ উপজেলার লামচর ইউনিয়নের পূর্ব পানপাড়া গ্রামের তোফায়েল আহমেদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে দুপুরে রামগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কাওসারুজ্জামান বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছেন। এরআগে সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে তাকে ঢাকার কোতয়ালী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরআগে কখনোই তিনি পুলিশ বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক বা গ্রেপ্তার হননি। তার বিরুদ্ধে অন্য কোন মামলাও নেই।
এসপি তারেক বিন রশিদ আরও জানান, রায়পুরের বামনী ইউনিয়নের বামনী গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ৩০ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মৃধা হত্যার ঘটনায় মামলার আসামি দেলোয়ার হোসেন মৃধা ও শিমুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে দেলোয়ারকে ২ অক্টোবর ঢাকার সদরঘাট ও শিমুলকে ৩ অক্টোবর খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ মামলায় অন্যান্য আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ১ অক্টোবর নিহত সাইফুলের স্ত্রী নাছিমা বেগম বাদী হয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে রায়পুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু বকর ছিদ্দিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) হাসান মোস্তফা স্বপন, সহকারী পুলিশ (রায়পুর সার্কেল) আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইওয়ান) একেএম আজিজুর রহমান মিয়া, রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক ও রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া।
প্রসঙ্গত, ১৪ সেপ্টেম্বর রামগঞ্জের পৌরসভার আঙ্গারপাড়া এলাকায় যাত্রী সেজে আলভী দেওয়ান হৃদয় দেওয়ান নামে এক যুবক রিপন নামে একজনের চোখে মরিচের গুড়া ছিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে রিকশা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ১৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন মারা যায়। একই রাতে হৃদয়কে নারায়ণঞ্জের রুপগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তার তথ্য অনুযায়ী ঘটনার সঙ্গে জড়িত মো. সুজন ও বেলাল হোসেন নামে আরও দুইজনকে নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়া ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর নিহত রিপনের ভাই মো. স্বপন বাদি হয়ে রামগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। নিহত রিপন রামগঞ্জ পৌর শহরের কাজিরখীল এলাকার মনির উদ্দিন বেপারী বাড়ির আবদুল কাদেরের ছেলে।