লক্ষ্মীপুরে কৃষকদের রাতের ঘুম হারাম করেছে গেছো ইঁদুর। আমনক্ষেতে হানা দিচ্ছে এসব ইঁদুর। ক্ষেতের অপরিপক্ক (কাঁচা) ধানগাছ কেটে ফেলছে। এতে গাছ মরে হলদে হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে এ ইঁদুরের উপদ্রব প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিষটোপ ও প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করেও কৃষকরা প্রতিকার পাচ্ছেন না।
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৮৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে রায়পুর, কমলনগর ও রামগতির কিছু ক্ষেতে গেছো ইঁদুর আক্রমণ করছে। তবে রায়পুরে এদের উপদ্রব বেশি। এ প্রাণী নদী-খালের পানিতে সাঁতার কেটে আসে। বাগান ও মাঠের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকায় এটি সহজে নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। গত মৌসুমে মোট আমন উৎপাদনের ৪-৫ শতাংশ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ইঁদুরের কারণে।
রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আক্তার হোসেন জানান, প্রতিটি ক্ষেতেই বিড়াল, খরখোশ আকৃতির ইঁদুর হানা দিচ্ছে। এর যন্ত্রণা ৭০ শতাংশ কৃষক ভোগ করছেন। রোগ দেখা দিলে ওষুধ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার নেই।
সদরের ভবানীগঞ্জ, রায়পুরের চরকাচিয়া, চরবংশী ও কমলনগরের চরলরেঞ্চের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কমবেশি প্রতিটি ক্ষেতেই ধানগাছ বড় আকৃতির ইঁদুর কেটে ফেলছে। রাতে এসব ইঁদুর হানা দিচ্ছে। ইঁদুরগুলো দেখতে বিড়ালের মতো। এটি ‘গাইচ্ছা-কট’ ইঁদুর বলে স্থানীয়ভাবে পরিচিত।
ভবানীগঞ্জে চরউভূতি গ্রামের কৃষক নুর মোহাম্মদ। তিনি জানান, তার ৬৪ শতকের প্রায় চার শতক জমির ধান সর্বনাশ করেছে ইঁদুর।
চর কালকিনির গ্রামের কৃষক রহমান মিঝি বলেন, ‘নদীপাড়ের সব জমিতে বিড়াল আকৃতির কট ইঁদুরের আক্রমণ শুরু হয়েছে। ইঁদুর তাড়াতে রাতে ক্ষেতের পাশে পুরোনো টায়ার পোড়াই, পটকা বাজাই, বিষ টোপ ব্যবহার করছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।’
রামগতির চর বাদাম এলাকার কৃষক বিজয় কৃষ্ণদাস জানান, তার ৫০ শতক ধানক্ষেতে বিড়াল আকৃতির ইঁদুরের আক্রমণে চার শতক ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
কমলনগর উপজেলার চরলরেঞ্চ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমি সাড়ে চার একর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। এখন ক্ষেতে ব্যাপকভাবে ইঁদুরের আক্রমণ ঘটেছে। ধানে থোড় (ফুল) আসার আগেই ইঁদুর অন্তত ১০ শতক জমির ধান পুরোপুরি কেটে ফেলেছে।’
বাংলাদেশ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের নোয়াখালী অঞ্চলের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, বিশেষ প্রকৃতির গেছো ইঁদুর পানিতে সাঁতার কাটতে পারে। এটি খুবই বেপরোয়া। একেকটির ওজন ৬০০-৭০০ গ্রাম। এর উৎস খুঁজে বের করতে না পারলে কৃষকের ক্ষতি বাড়বে।
এ কৃষিগবেষক আরও বলেন, আগে ফসলের মাঠে পেঁচা, সাপ, গুইসাপ, বেজি, শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীর বিচরণ ছিল। তারা ইঁদুর ধরে খেতো। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও ইঁদুর সমস্যরোধে ওই প্রাণীগুলোর প্রয়োজন। কিন্তু এখন তা বিলুপ্ত হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন বলেন, বিভিন্ন স্থানে ধানক্ষেতে গেছো ইঁদুর আক্রমণ করার খবর পাচ্ছি। ইঁদুর দমনে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তারা সচেতনতামূলক সভা ও লিফলেট বিতরণ করছেন ।