প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর-রামগঞ্জ আঞ্চলিক মহা-সড়কের উপর বন বিভাগের কর্মচারি দিয়ে বনজ সম্পদ (কাঠ) চেকিংয়ের নামে যানবাহন থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে রামগঞ্জ উপজেলা বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।তার কর্মকর্তার নির্দেশে পদ্মা বাজার এলাকায় কর্মচারী সাইফুল ইসলাম প্রতিদিন ২১-২৫টি গাছ বহনকারি ট্রলি ও ট্রাক থেকে ৫০-৫০০-৭০০ করে টাকা তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে রায়পুর ও রামগঞ্জ করাতকল মালিক ও লাকড়ি ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ উঠেছে জেলা সহকারী বন সংরক্ষক ফিরোজ আলম চৌধুরী কাছে এ বিষয়ে একাধিক ব্যাক্তি অভিযোগ করার পরও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।
গত তিন মাস ধরে বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান লাইসেন্স না করায় হুমকি দিয়ে রামগঞ্জ শহরের সড়কের পাশে লাকড়ি ব্যবসায়ী মনিরের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। নিরুপায় হয়ে মনির ৯ হাজার টাকা কিস্তিতে দিবে ও ৩ হাজার টাকা নগদ দেন।
তার পাশের লাকড়ি ব্যাবসায়ী জসিমের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করে ৮ হাজার টাকা আদায় করা হয়। প্রায় ২৫ দিন আগে কাটাখালি এলাকার করাতকল মালিকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। দিঘির পাড় এলাকার করাতকল মালিক সেলিমের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়।
আরও জানা যায়, রামগঞ্জ উপজেলা রেঞ্জের আওতায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার সড়কের পাশে সরকারি বনভূমি রয়েছে। প্রায় ৫০টি করাত কল ও রায়পুর থেকে পানপাড়া হয়ে রামগঞ্জ ও চাটখিল সড়কে পাশে সরকারি খাসজমিতে ১০জন লাকড়ি ব্যবসায়ী রয়েছেন।
রামগন্জের পদ্মা বাজার স্থানে উপজেলা বন কর্মকর্তার নির্দেশে অবৈধভাবে গাছ বহনকারি ট্রাকসহ যানবাহন থামিয়ে বনজ সম্পদ (কাঠ) চেকিংয়ের নামে যানবাহন থেকে ৫০০-৭০০ টাকাকরে চাঁদা আদায় করছে সাইফুল ইসলাম।
যানবাহন থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি ওই সড়কে চলাচলরত কাঠের তৈরি আসবাবপত্র, কাঠগাছ ও লাকরিভর্তি যানবাহনের চালক ও স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
পানপাড়া এলাকার ভ্যানচালক আমির হোসেন (ছদ্ম নাম) ও চন্ডিপুর বাজারের ট্রাক চালক সোহাগ মিয়া (ছদ্ম নাম) জানান, রায়পুর থেকে গাছসহ বিভিন্ন কাঠ রামগন্জের পৌরশহর দিয়ে চাটখিল ও হাজিগন্জে নিয়ে আসার পথে পদ্দা বাজার এলাকায় চেকপোস্টের নামে ৫০ –৫০০ ও ৭০০ টাকা করে প্রতি গাড়ি দিতে হয়।
ট্রাক চালক আবদুর রহমান জানান, প্রতিদিন ৮-১০ ব্যবসায়ীদের গাছ নিয়ে রায়পুর থেকে রামগঞ্জ শহর দিয়ে চাটখিল ও হাজিগঞ্জ যাওয়ার সময় পদ্দা বাজার এলাকায় বন বিভাগের এক কর্মচারিকে ৫শ টাকা করে দিতে হয়। টাকা না দিলে মামলার ভয় দেখানো হয়।
সোমবার দুপুর থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত (১৯ ফেব্রুয়ারী) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সাইফুল ইসলাম (৩০) নামের চতুর্থ শ্রেণীর মাস্টাররোল কর্মচারি যানবাহন থামিয়ে টাকা নিচ্ছেন।এ সময় টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে জবাবে বলেন বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান স্যারের নির্দেশে গত তিন মাস ধরে সকাল থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সড়কের পাশে বসে থেকে ৫০-৫০০ টাকা করে তুলছি টাকা গুলো বিকেলে তাকে বুঝিয়ে দিতে হয়।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মোবাইলে বলেন, আমি কর্মচারি দিয়ে কোন চাঁদাবাজি করছি না। গাছ ও কাছ পাচারকারি ধরতে সাইফুল ইসলামকে পাহারায় রাখা হয়। করাতকল মালিক ও লাকড়ি ব্যবসায়ীরা আমার নামে মিথ্যা বলছে বলে তার দাবী।
জেলা বন কর্মকর্তা সাহিন আলম জানান, পদ্মা বাজারে মহাসড়কের সামনে কোনো চেকপোস্ট নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নোয়াখালি বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু ইউসুফ বলেন, উপজেলা বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সড়কে গাছ বহনকারি ট্রাকসহ যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য- বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান প্রায় তিন মাস আগে রাঙ্গামাটি জেলা থেকে বদলি হয়ে রামগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেন।