নিজস্ব সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুরের রামগতির বিচ্ছন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন চর আবদুল্লাহতে দেড় শতাধিক গরু-ছাগল-ভেড়া চুরির ঘটনায় সংঘবদ্ধ চোরের দলের শাস্তির দাবিতে ৫ দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে।
চুরি হওয়া ৭টি গরু উদ্ধার ও চোরদের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বিকেলে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে ভূক্তভোগী কৃষক নাজিম উদ্দিন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে বলা হয় বাথান মালিকদের মহিষ তার ১৮০ শতাংশ জমির খেসারির ডাল খেয়ে ফেলে। ফসল নষ্ট ও গরু চুরিতে তার প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুরো চর জুড়েই চোরের ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত হাস দিদারের নেতৃত্বে এসব চুরির ঘটনা ঘটছে। এ দিদার চরআবদুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মঞ্জুর অনুসারী।
এরআগে তিনি বুধবার (১ মার্চ) রামগতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম শান্তুনু চৌধুরীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। একই অভিযোগ তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ ও রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেনের কাছেও করেছেন।
অভিযোগকারী নাজিম চরআবদুল্লাহ ইউনিয়নের চরআবদুল্লাহ গ্রামের মৃত মো. হানিফের ছেলে ও পেশায় কৃষক। গরুর দুধ বিক্রি ও উৎপাদিত কৃষিপন্য বিক্রি করে তার সংসার চলতো। মহিষ দিয়ে উৎপাদিত ফসল বিনষ্ট ও গরুগুলো চুরি হয়ে যাওয়ায় কষ্ট করে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাকে। স্ত্রী, ৫ মেয়ে ও ২ ছেলেকে নিয়ে দুর্দশায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এতে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে গরুগুলো উদ্ধার ও চোরদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্র জানায়, ১৭ জানুয়ারি চর আবদুল্লাহতে নাজিমের ১৮০ শতাংশ জমির খেসারির ডাল বাথান মালিক লাইলির বাপ, কাশেম, নুরনবী ও সেলিম হুজুরের মহিষ খেয়ে পেলে। এতে তিনি মহিষগুলো বেঁধে রেখে ক্ষতিপূরণ দাবি করে। পরে হাসান নামে এক বাথান মালিক ক্ষতিপূরণের আশ^াস দিয়ে মহিষগুলো ছাড়িয়ে নেয়। কিন্তু পরদিন রাতেই নাজিমের গোয়ালে থাকা ৭টি গরু চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। এ ঘটনায় নাজিম রামগতি থানায় হাস দিদার, মো. ইউছুফ, রাসেল, আবদুর রহমান, দিদার, সুমন ও বাবুলসহ অজ্ঞাত আরও ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। অভিযোগের কথা শুনে রাগান্বিত হয়ে রাসেল অন্যান্য বাথান মালিকদের গরু চুরির ঘটনা স্বীকার করে। নাজিমের অভিযোগের কারণে ওই গরুগুলো ফেরত দেবে না বলে হুমকি দেয়। তখন রাসেল চোরের ‘গডফাদার’ হাস দিদারের নাম উল্লেখ করে। অভিযোগের ভিত্তিতে থানা পুলিশ অভিযুক্ত রাসেলকে আটক করে। পরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।
এদিকে অভিযোগের পর থেকেই হাস দিদার পলাতক ছিল। কয়েকদিন পর প্রকাশ্যে এসে তিনি চুরি হওয়া গরুর মালিকদের বিভিন্ন ধরণের হুমকি দেয়। একটি নৌকাতে করে নাজিমের ৭টি গরু ওই চোরের দল নিয়ে যায়। নৌকাটিও চোরাই ছিল। পরে মেঘনা নদীর বয়ারচর এলাকা থেকে মালিক নৌকাটি উদ্ধার করে। সম্প্রতি চর থেকে বারেক মাঝির ৪টি, তার ভাতিজার ৪টি, জসিমের ৩টি, মাওদ গাজীর ৪টি, নাজু মাঝির ৮টি গরুসহ বিভিন্ন জনের শতাধিক গরু নিয়ে গেছে চোরের দল। এছাড়াও বিভিন্ন জনের প্রায় ২৭ টি ভেড়া চুরির ঘটনা ঘটেছে।
চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মঞ্জুর বলেন, ঘটনাটি নিয়ে নাজিম থানায় অভিযোগ দিয়েছে শুনেছি। হাস দিদারের জড়িত থাকার বিষয়টি সত্য নয়। শুনেছি তার নামেও নাকি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। হাস দিদার তার লোক কিনা জানতে চাইলে চেয়ারম্যান কল কেটে দেন।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম শান্তুনু চৌধুরীর দাপ্তরিক মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা (এসএমএস) পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
রামগতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল বলেন, অভিযোগটি পেয়েছি। কিন্তু এটি পুলিশ প্রশাসনের কাজ। পুলিশের যাতায়াতের সুবিধার জন্য আমাদের দুটি ওয়াটার অ্যাম্বলেন্স রয়েছে। ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে তারা অ্যাম্বুলেন্সগুলো ব্যবহার করতে পারবে। এতে ২০ মিনিটেই তারা চরে অভিযান পরিচালনা করতে পারবেন। দুর্গম চর হওয়ায় সেখানে অপরাধ বেশি হয়। এজন্য সেখানে পুলিশ প্রশাসনের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, চরআবদুল্লাহ বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। সেখানে ট্রলার ভাড়া করে যাতায়াতে প্রচুর টাকা খরচ হয়। প্রায় ৩ ঘন্টা সময় লাগে। দুর্গম এ চরে সচরাচর অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। নাজিমের অভিযোগের ভিত্তিতে রাসেল নামে একজনকে আমরা আটক করে এনেছি। নাজিম সন্দেহজনকভাবে তার নাম দেয়। জিজ্ঞাসাবাদের চুরির ঘটনায় রাসেলের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। এতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নাজিমকে বলা হয়েছে চুরির ঘটনা সম্পৃক্ত আছে, যাদেরকে আটক করলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাবে তাদের নামে অভিযোগ করার জন্য। কিন্তু নাজিম আর আসেনি।