লক্ষ্মীপুরে মাটি কাটা চক্রের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ইউপি চেয়ারম্যান !

নিজস্ব সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুরে অবৈধভাবে মাটি কাটতে বাঁধা দেওয়ায় মো. মাহফুজুর রহমানকে বিভিন্ন ধরণের হুমকির অভিযোগ উঠেছে। তিনি সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তার ইউনিয়নে একটি চক্র ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও ভেক্যু মেশিন দিয়ে ফসলী জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে আশপাশের এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয়সহ হুমকির মুখে পড়ায় তিনি মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনে প্রশাসনের সহযোগীতা চেয়েছেন। এছাড়া এ চক্রের বিভিন্ন হুমকিতে নিজেই নিরপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় তিনি সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন। এরআগে রোববার (৫ মার্চ) সকালে ইউনিয়নের বিরাহিমপুর গ্রামে নতুন সড়ক এলাকায় ভেক্যু মেশিন দিয়ে একটি প্রভাবশালী চক্র ফসলি জমির মাটি কাটছিলেন। খবর পেয়ে তিনি বশিকপুর পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যদের নিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করে দেন। একই সঙ্গে ভেক্যু মেশিনের চাবি নিয়ে পুলিশের হেফাজতে রাখেন। ঘটনাটি তিনি জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহেল রানা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসেন ও চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলামকে জানিয়েছেন। এরমধ্যে ঘটনার দিন দুপুরে চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসির নির্দেশে পুলিশ ক্যাম্পের লোকজন ভেক্যু মেশিনের চাবি ওই চক্রের কাছে দিয়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে ওসি তার সঙ্গে কোন যোগাযোগই করেননি।

এদিকে ঘটনার সময় চক্রের সদস্য মো. বাবলু ওরফে মোটা বাবলু, মশিউর রহমান নিশান ও কালু ওরপে পিচ্ছি কালু পুলিশের সামনে চেয়ারম্যানকে মারার জন্য তেড়ে আসে। এসময় বিভিন্ন ধরণের হুমকিও দেয়। পরে তিনি জেলা শহরে চলে আসলে ফের তারা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে গিয়ে প্রকাশ্যে গালমন্দ করে। তাদেরকে বাধা দিলে অনেক বড় ক্ষতি করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান।

চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, মাটি কাটার স্থানে ভেক্যু নেওয়ার জন্য মূল রাস্তা ঢালু করা হয়েছে। এতে রাস্তাটি হুমকির মুখে রয়েছে। বিরাহিমপুর এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে তারা মাটি কাটছে। এতে এলাকায় কয়েক একর জমি অনাবাদি রয়ে গেছে। মাটির উর্বর অংশ কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে দেওয়ায় সেখানে চাষাবাদ করা সম্ভব নয়। এছাড়া খাল থেকে পানি নিয়ে বিভিন্ন জমি থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ বালু উত্তোলনের কারণে আশপাশের বাড়িঘর ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। মাটি পিকআপ ভ্যান চলাচলে রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। যে স্থানে মাটি উত্তোলন করা হয় সেখানের রাস্তায় পিকআপ চলাচলের সময় বালুতে সব ধোঁয়া হয়ে থাকে।

মাহফুজুর রহমান বলেন, মোটা বাবলু, নিশান ও পিচ্ছি কালুসহ একটি চক্র ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন করে আসছেন। প্রভাবশালীদের মদদে তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছে। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছে না। মাটি কাটায় বাধা দেওয়ার পর থেকে তাদের একের পর এক হুমকিতে আমি নিজেও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।

বক্তব্য জানতে বাবলু, নিশান ও কালুর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন তারা সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান আবুল কাশেম জিহাদীর সহচর। জিহাদী চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যদের দিয়ে তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাটি কাটবে না বলায় ভেক্যুর চাবি সংশ্লিষ্টদেরকে ফেরত দিয়েছি। তবে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন বন্ধের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন ডিসি, ইউএনও ও এসিল্যান্ড। তবুও আমরা বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানকে আদালতে অভিযোগ দিতে পরামর্শ দিয়েছি।

সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহেল রানা বলেন, চেয়ারম্যান আমাকে ঘটনাটি বলেছেন। অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে সকল ধরণের সহযোগীতা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসেন ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মকবুল হোসেনের দাপ্তরিক মোবাইলফোনে কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।

আরও পড়ুন