মোহনানিউজ ডেস্ক: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর সাবরেজিস্ট্রার অফিসের নাইটগার্ড কাম ঝাড়ুদারের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাবরেজিস্ট্রারের অফিসে বসে প্রতিদিন দলিল লেখক ও সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে প্রকাশ্যেই ঘুষের মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন ঝাড়ুদার মো. সোহেল।
জানা যায়, সোহেল সাবরেজিস্ট্রার অফিসের নাইটগার্ড কাম ঝাড়ুদার হিসেবে অস্থায়ীভাবে কর্মরত রয়েছেন। ঝাড়ুদার হলেও সাবরেজিস্ট্রার আবুল কালাম আজাদের একান্ত কাছের মানুষ হিসেবে সবাই চেনেন। এই সুবাদে অফিস সহায়কের চেয়ারে বসেই ঘুষ নেন তিনি।
এ ছাড়া সেবাগ্রহীতার বাড়িতে গিয়ে কমিশনের মাধ্যমে দলিল করাতে অফিসারদের সঙ্গে যেতে দেখা যায় সোহেলকে। এমন জায়গায় তাঁর যাওয়ার কথা না থকলেও বড় কর্তার হাত ধরে এসব কাজ করেন বলে অভিযোগ দলিল লেখক ও সেবা নিতে আসা অনেকেরই।
সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাগজে ঘাটতি থাকা দলিল কত টাকা হলে রেজিস্ট্রি করবেন সাবরেজিস্ট্রার তা নির্ধারণ করেন সোহেলকে। তাঁর বেঁধে দেওয়া টাকার পরিমাণ নড়চড় হলে জমি রেজিস্ট্রি করেন না সাবরেজিস্ট্রার আবুল কালাম আজাদ। আর সেই ক্ষমতার দাপটে ঘুষের টাকা এদিক থেকে ওদিক করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন ঝাড়ুদার সোহেল।
এদিকে সমস্যার দলিলগুলো নিয়ে যদি কোনো দলিল লেখক সরাসরি সাবরেজিস্ট্রারের কাছে যান, তাহলে তিনি (সাবরেজিস্ট্রার) পরিষ্কার জানিয়ে দেন সোহেলের সঙ্গে কথা বলতে। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগান সোহেল। সাবরেজিস্ট্রারের পর অফিসের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত সোহেল।
এদিকে গত সপ্তাহে মঙ্গলবার দুপুরে রায়পুর সাবরেজিস্ট্রার অফিসে গেলে দেখা যায়, ঝাড়ুদার সোহেল অফিস সহায়কের চেয়ারে বসে কাজ করছেন। তাঁর সামনে দলিলের স্তূপ। অথচ সোহেল কাজ করছেন ঝাড়ুদার হিসেবে। সোহেলকে অফিসের চেয়ারে বসে প্রকাশ্যেই ঘুষের টাকা নিতে দেখা যায়।
স্থানীয় লোকমান ও আবদুর রহিম ২৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যে একটি জমি বিক্রি করার জন্য দলিল দিচ্ছেন। এ সময় সোহেল ওই দলিল করাতে দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। পরে গোপনে সেটা দফারফা হয়। একই চিত্র অভি হোসেন, শাওন ইসলাম ও দলিল লেখক হারুন ও ইউসুফের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার করে টাকা নিতে দেখা গেছে। শুধু শাওন, অভি, হারুন বা ইউসুফই নন, প্রতি দলিলে এইভাবে সাবরেজিস্ট্রারের কথা বলে টাকা নিচ্ছেন সোহেল।
টাকার বিষয়টি জানতে চাইলে হারুনুর রশিদ বলেন, ‘কিছু করার নাই। আম মোক্তারনামা দলিল করাতে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে গড়িমসি করলে সোহেল অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। পরে ৬ হাজার টাকা দিয়ে রক্ষা পাই।’
লক্ষ্মীপুর থেকে সেবা নিতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নাইটগার্ড কাম ঝাড়ুদার মো. সোহেল হলেও মূলত সাবরেজিস্ট্রারের ডান হাত। সাবরেজিস্ট্রার সরাসরি টাকা না নিলেও সোহেলের মাধ্যমে প্রকাশ্যেই ঘুষের টাকা আদায় করছেন। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতি দলিলের চাহিদামতো টাকা না দিলে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ তিনি একজন ঝাড়ুদার। তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ।’
এই ব্যাপারে নাইটগার্ড কাম ঝাড়ুদার সোহেল বলেন, ‘সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নাইটগার্ড কাম ঝাড়ুদার হিসেবে কর্মরত রয়েছি। আমি কোনো টাকাপয়সা নিই না। এ ছাড়া অফিসের চেয়ারে কেন বসব। এটা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ। আমি কেন টাকা নিব!’
এ নিয়ে জানতে রায়পুর সাবরেজিস্ট্রার আবুল কালাম আজাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার মো. লোকমান হোসেন বলেন, ‘সোহেল নাইটগার্ড বা ঝাড়ুদার কি না সেটা আমার জানা নেই। টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও বিষয়টি যেহেতু আমি জেনেছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সূত্র:- আজকের পত্রিকা