পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দি থাকা জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া অবশেষে মুক্তি পাচ্ছেন। ৪৪ বছর কারাভোগ শেষে আগামীকাল (রোববার, ১৮ জুন) তিনি মুক্তি পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
নিজের সাজার মেয়াদ কমানোর বাসনায় কয়েদি থেকে জল্লাদ বনেছেন তিনি। একের পর এক অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন কারাগারের চার দেয়ালের বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেতে। অবশেষে মুক্তি সেই বাসনা সত্যি হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে জেল সুপার সুভাষ ঘোষের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
নিজের সাজার মেয়াদ কমানোর বাসনায় কয়েদি থেকে জল্লাদ বনেছেন তিনি। একের পর এক অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন কারাগারের চার দেয়ালের বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেতে। অবশেষে মুক্তি সেই বাসনা সত্যি হচ্ছে।
১৯৭৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৩৬টি মামলায় শাহজাহানের ১৪৩ বছরের সাঁজা হয়। পরে ৮৭ বছর জেল মাফ করে তাকে ৫৬ বছরের জন্য সাঁজা দেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর ও সশ্রম কারাদণ্ডের সুবিধার কারণে সেই সাঁজা ৪৩ বছরে এসে নামে। দুইটি মামলায় ৫০০০ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাস করে অতিরিক্ত এক বছর জেল খেটে ৪৪ বছর পর আগামীকাল মুক্ত আকাশে শ্বাস ফেলার সুযোগ পাবেন জল্লাদ শাহজাহান।
১৯৮৯ সালে সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে শাহজাহান তার জল্লাদ জীবনের সূচনা করে। এরপর কারাগারে মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়নের সময় আসলেই তার ডাক পরে। টানা আট বছর এই কাজ করার পর ১৯৯৭ সালে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান জল্লাদের স্বীকৃতি দেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, একটি ফাঁসির রায় বাস্তবায়ন করতে প্রধান জল্লাদের সঙ্গে ছয়জন সহযোগী লাগে এবং ফাঁসির রায় কার্যকর করলে প্রত্যেক জল্লাদের দুই মাস চার দিন করে কারাদণ্ড মওকুফ হয়। এ ছাড়া কারাগারে যারা জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাহজাহান তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
পুরো নাম মো. শাহজাহান ভূঁইয়া। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ। জন্মস্থান নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে। তার বাবার নাম হাসান আলী ভূঁইয়া, মাতা সবমেহের। তিনি পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত।
ছেলে হিসেবে শাহজাহান খুবই ভালো ছেলে ছিলেন। পারতপক্ষে করও উপকার ছাড়া ক্ষতি করার চেষ্টা করতেন না। তবে সে প্রচণ্ড বন্ধু পাগল মানুষ ছিলেন। একবার তার গ্রামে নারী ঘটিত একটি ঘটনা ঘটে। শাহজাহানের দুই বন্ধুসহ তার নামে অভিযোগ ওঠে। গ্রামে তাকে নিয়ে বিচারে বসা হয়। সেই বিচারে তাকে অপরাধী প্রমাণিত করে তাকে সাজা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তার ক্ষিপ্ততা শুরু। তিনি অপমান সহ্য করতে না পেরে সিদ্ধান্ত নেন অপরাধ জগতে প্রবেশ করে এই অপমানের চরম প্রতিশোধ নিবেন। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ।
নারীঘটিত ওই ঘটনার পরে তিনি বাংলাদেশের একজন বহুল পরিচিত সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছেন। তাছাড়া কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করার পর থেকে যেকোনো অপারেশনে তার চাহিদা দিনকে দিন বৃদ্ধি পেতে থাকলো। তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অপারেশন করেছিলেন ১৯৭৯ সালে মাদারীপুর জেলায় এবং এটাই ছিল তার জীবনে সর্বশেষ অপারেশন। সেখানে তার অপারেশন শেষ করে মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে শাহজাহানের দল মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাবে। মানিকগঞ্জে পুলিশ চেক পোস্ট বসালে শাহজাহান তার ওই এলাকার বাহিনীর মাধ্যমে তা জেনে জান। সব জেনেই ওই এলাকা দিয়ে ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। মানিকগঞ্জে পুলিশের সাথে গুলাগুলিও হয় কিন্তু পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। এরপর ঢাকায় পৌঁছে যখন নরসিংদীর উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রতিমধ্যে পুলিশ তাকে আটক করে ফেলে। তার গতিময় জীবনের এখানেই সমাপ্তি এবং এরপর থেকে তার বন্দী জীবন শুরু।
বাংলাদেশের সকল কারাগারের প্রধান জল্লাদ শাহজাহান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ ঘাতক, ৬ জন যুদ্ধাপরাধী, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি খুকু মনির, ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ বাংলাদেশের আলোচিত প্রায় ৪০ জনের ফাঁসি দিয়েছেন।