লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় দুই কোটি টাকার জায়গা দখলে রেখেছেন প্রভাবশালী পরিবার। উপজেলার চরলরেন্স বাজারের রামগতি-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর- পশ্চিম পাশের ১৩ শতাংশ জায়গা দখল করে ২০টি দোকানঘর নির্মাণ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজুল ইসলাম ও তার ভাতিজা আবুল কাশেম। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে অন্যান্য জায়গার বিষয়ে উপজেলা ভূমি অফিসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও তারা নীরব ভূমিকা অবলম্বন করে।
জানা যায়, অসাধু কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দীর্ঘ বছর থেকে উপজেলার চরলরেন্স বাজারে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ১৩ শতাংশ জায়গা দখলে নিয়ে দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে আসছেন সিরাজুল ইসলাম ও তার ভাতিজা আবুল কাশেম। ২০১৭ সালে ওই দোকানগুলো আগুনে পুড়ে যায়। পরে ওই প্রভাবশালী পরিবার পুনরায় দোকান তুলতে গেলে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিক উদ্দিন, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন মোল্লাসহ আওয়ামী লীগের কিছু লোক বাধা দেয়।
পরে ওই জায়গা সফিক উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন মোল্লারা দখল করে এবং তারা দোকানঘর নির্মাণ করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। এরপর পেছনে সিরাজুল ইসলাম ও তার ভাইদের মালিকানাধীন জমি থাকায় সফিক কমান্ডার ও গিয়াস মোল্লাসহ অন্যরা দোকান প্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা করে নিয়ে ওই দোকানগুলো সমঝোতার ভিত্তিতে সিরাজুল ইসলাম ও তার ভাতিজাদের ছেড়ে দেয়। সমপ্রতি দখলদার সিরাজুল ইসলাম ও তার ভাতিজা আবুল কাশেম আগের দখল থেকে সামনে আরও ৫-৬ ফুট দখল করে দোকানঘর বাড়ায়।এ ছাড়াও এই সিরাজুল ইসলাম চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের জায়গাও দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে আসছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের ২৬শে জুন ওই এলাকার শুক্কুর আহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি এ দখলবাজ সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দেন।
জেলা প্রশাসক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিক উদ্দিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গাটি আমরা দখল করে লিজ নেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পেছনের জায়গা সিরাজুল ইসলাম ও তার ভাইদের হওয়ায় আমরা সমঝোতার ভিত্তিতে ছেড়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এক সময় ওই জায়গা লিজ এনেছি। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের লিজ বাতিল করে দেয়। পেছনের জায়গা আমাদের হওয়ায় তাই সামনের অংশ আমরা দখলে রেখেছি।
লক্ষ্মীপুর পাউবো’র সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কাজী শাহিন বিন কাশেম বলেন, লক্ষ্মীপুরে আমাদের অনেকগুলো জায়গা রয়েছে। এ সুযোগে কিছু অসাধু দখলবাজরা তাদের সুযোগ কাজে লাগায়। তাছাড়া এসব বিষয়ে কমলনগর উপজেলা ভূমি অফিস থেকে আমরা সহযোগিতা চেয়েও ব্যর্থ হয়েছি।
কমলনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফেরদৌস আরা বলেন, জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হওয়ায় অবৈধ দখলদারদের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। তারা তালিকা দিতে গড়িমসি করছে। আর সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগের চিঠি পেয়েছি। বিষয়টির তদন্ত চলছে।