গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভে গুলিতে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম আঞ্জুয়ারা বেগম (২৪)। জামাল উদ্দিন নামে আরও এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
গতকাল ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি ও জরুনসহ আশপাশের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আজ বিক্ষোভে নামেন।
সকাল ৭টার পর থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। দুপুর ১২টা ও সাড়ে ১২টার দিকে দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মধ্যে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
গুলিবিদ্ধ জামাল উদ্দিন বলেন, আমি ইসলাম গার্মেন্টসে চাকরি করি। সকালে অফিসে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে আমি গুলিবিদ্ধ হই। প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এখানে পাঠানো হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজন ঢাকা মেডিকেলে আসে। এদের মধ্যে ইসলাম গার্মেন্টসের কর্মী আঞ্জুয়ারা বেগম এখানে আসার আগেই মারা গেছেন।
ন্যূনতম বেতন ২৫ হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, সফিপুর ও মৌচাকসহ আশপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। গতকাল পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা ঘোষণা করে মজুরি বোর্ড। এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শ্রমিকরা।
বুধবার সকাল থেকে কোনাবাড়ি এলাকার স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস লিমিটেড, রিপন নিটওয়্যার লিমিটেড, ইসলাম গার্মেন্টস ও বেস্ট অল সোয়েটারসহ আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সকাল ৮টার দিকে কয়েকশ শ্রমিক কাশিমপুরের জরুন মোড়ের সামনে একত্রিত হয়ে হাতে ইট ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করতে থাকে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে কাঠ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুরের চেষ্টা করে তারা। এক পর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে উত্তেজিত শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে রওশন মার্কেট হয়ে হাতিমারার দিকে এগিয়ে যায়।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আশরাফ উদ্দিন জানান, শ্রমিকদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হলেও শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টিয়ারশেল ছুড়লে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, বুধবার সকাল থেকেই শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। আমরা তাদের বলেছিলাম আপনারা নিজেদের জায়গায় থাকুন, আপনাদের ফ্যাক্টরিতে ঢুকুন, কাজ পছন্দ না হলে বন্ধ রাখুন কিন্তু অন্য কোনো কারখানায় ভাঙচুর করতে যাবেন না। অন্য কোনো কারখানার শ্রমিকদের নামাতে যাবেন না। কিন্তু তারা আমাদের নির্দেশনা না শুনে অন্য কারখানার শ্রমিকদের নামানোর চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।