প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে পথরেখা প্রণয়ন ও প্রয়োগের আহ্বান টিআইবির

ঢাকা, ১৫ জুলাই ২০২৪: প্রধানমন্ত্রীর নিজের বাসার সাবেক এক কর্মীর বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হওয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে ‘আপন-পর জানি না; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকবে’Ñমর্মে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছেন, বিষয়টিকে তার দুর্নীতিবিরোধী কঠোর সদিচ্ছার পরিচায়ক হিসেবে বিবেচনা করতে চায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর “জিরো টলারেন্স”Ñঘোষণা ও ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে সুনির্দিষ্ট সময়াবদ্ধ পথরেখা প্রণয়ন ও তার কঠোর প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।সাম্প্রতিককালে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজের অবস্থান বা ক্ষমতাকাঠামোর সঙ্গে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার বহু ঘটনা সামনে এসেছে। এ প্রসঙ্গে সরকারের উদ্যোগ বিষয়ে সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে গত ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নিজের বাসার সাবেক এক কর্মীর ৪০০ কোটি টাকার মালিক হওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছেন এবং তিনি এ ঘটনায় ব্যবস্থা নিয়েছেন মর্মে দেশবাসীকে অবহিত করেছেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের পরিচায়ক হিসেবে বিবেচনার যোগ্য উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার নামে এবং বাস্তবে সরকারি অন্যান্য উচ্চ পদে অর্পিত ক্ষমতার বা তার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ সম্পদ অর্জনের যে সংস্কৃতি স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছেÑ এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ ও অস্বস্তির প্রকাশ ঘটেছে। উক্ত কর্মীর বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন; “এসব জঞ্জাল সাফ করতে হবে; হাত যখন দিয়েছি, ছাড়ব না; দুর্নীতিবাজদের ধরলেই সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, এটা বিশ্বাস করি না; আপন-পর জানি না; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকবে” মর্মে যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেনÑ তা সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত।’
দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ-সম্পদ আহরণকারীদের বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণাকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ‘চার শ’ কোটি টাকার মালিক হওয়া প্রধানমন্ত্রীর বাসার প্রাক্তন কর্মী, যিনি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী হেলিকপ্টার ছাড়া চলেন না, তার অর্থ-সম্পদ দুদককর্তৃক অনুসন্ধান সাপেক্ষে যদি বৈধ সূত্রের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রমাণিত হয়, তবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হলে সরকার প্রধানের এ অবস্থানের জন্য অবমাননাকর হবে। কারণ, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের বিচার নিশ্চিতের আইনগত বাধ্যবাধকতা ও রাজনৈতিক প্রত্যয়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। একইভাবে যে আলোচিত ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতে এ অবস্থান ঘোষিত হয়েছে, তার কেন্দ্রীয় চরিত্রসমূহ, বিশেষ করে প্রাক্তন সেনাপ্রধান, প্রাক্তন পুলিশ ও র‌্যাবপ্রধান, প্রাক্তন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সদস্যসহ সকল উচ্চপদে আসীন অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গের দুর্নীতির অভিযোগের সুষ্ঠু ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত তদন্তসাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’
“দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেই সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে” এমন অজুহাতকে পুরোপুরি অযৌক্তিক প্রমাণ করেছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যÑউল্লেখ করে ড. জামান আরো বলেন, ‘এ প্রেক্ষিতে সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি যে, প্রধানমন্ত্রীর উল্লিখিত বক্তব্য ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার অর্থবহ ও কার্যকর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট সময়াবদ্ধ পথরেখা প্রণয়ন করুন ও তার কঠোর প্রয়োগ করে দুর্নীতির ক্রমবর্ধমান ব্যাপকতা ও বিচারহীনতার জন্য জনমনে উদ্ভূত উদ্বেগ ও শঙ্কা নিরসনের পথ সুগম করুন।’

 

আরও পড়ুন