তাইওয়ানের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন এই তথ্য।
এক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সফরে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন শি জিনপিং। বুধবার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার উডসাইড শহরে জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন বাইডেন। সেই বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি তাকে স্পষ্টভাবে বলেছি যে (তাইওয়ানের) নির্বাচনে আমি কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ চাই না।’
আগামী জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা তাইওয়ানে। তবে স্বায়ত্বশাসিত এই দ্বীপভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী রাজনীতিকরা সেই নির্বাচনে চীনা হস্তক্ষেপের আশঙ্কা করছেন। তাদের সেই আশঙ্কা নিতান্ত অমূলকও নয়; কারণ গত দেড়-দুই বছর ধরে ব্যাপক উত্তেজনা শুরু হয়েছে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে।
তাইওয়ান একসময় চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ১৯৪৯ সালে মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বেইজিং দখল করার পর বেইজিংয়ের কমিউনিস্ট বিরোধী শাসকগোষ্ঠী তাইওয়ানে পালিয়ে যান এবং চীনের ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাইওয়ান।
সেই থেকে তাইওয়ান নিজেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে আসছে। দ্বীপ ভূখণ্ডটির নিজস্ব সরকার, অর্থনীতি ও মুদ্রাও রয়েছে। তবে চীন এখনও তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ডের অংশ মনে করে এবং বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখনও তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিবর্তে ‘ওয়ান চায়না’ বা ‘এক চীন’ নীতির প্রতি আস্থা জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে গত শতকের পঞ্চাশের দশকে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির আওতায় তাইওয়ানের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি করে আসছে দেশটি।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, তিনিও ‘এক চীন’ নীতির প্রতি আস্থাশীল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বরাবর এক চীন নীতিতে আস্থাশীল এবং তাতে বদল আনার কোনো পরিকল্পনা আমার নেই। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের চুক্তি এবং আমি জিনপিংকে বলেছি যে, এতে কোনো বদল আসবে না।’
বাইডেনের বক্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়ায় এখনও নিজে কিছু বলেননি জিনপিং। তবে চীনের প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ এবং দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক নেতা এক বার্তায় বলেছেন, ‘আমার মনে হয় প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলতে চেয়েছেন যে যতদিন চীন এবং তাইওয়ানের সম্পর্কের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা না আসবে, ততদিন মধ্যস্থতার ভূমিকায় থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।’
‘চীন তাইওয়ানের এই স্ট্যাটাস কিউ অবস্থানকে সম্মান করে এবং তাইওয়ানের নির্বাচনের প্রতিও চীনের জনগণ শ্রদ্ধাশীল। তাই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের কোনো প্রশ্ন এখানে অপ্রাসঙ্গিক।’
সূত্র : দ্য হিল