প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে হায়দরগঞ্জ রোকেয়া হাসমতের নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের এসএসসি পরীক্ষায় কেন্দ্র ফির নামে দুইবারে অতিরিক্ত ৪০০-৬০০ টাকা করে ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। জনপ্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেন্দ্র ফি ও বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষার ফিসহ ২২০০ টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। গত ১২ ফেব্রুয়ারী রায়পুরে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও গত ৮ দিনেও ব্যাবস্থা নেয়া হয়নি বলে ৭ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এই অভিযোগ করেন।এদিকে, এসএসসি পরীক্ষা শুরুর দুদিন আগে রায়পুরের মিতালি বাজার মডেল একাডেমির শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় নিয়ে ইউএনও ও স্থানীয় এমপিকে জানানো হয়। পরে এমপি ও ইউএনও’র নির্দেশে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিয়েছেন।
রোকেয়া হাসমতের নেছা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুরভী আক্তার, ঈলিশা আক্তার ও লিপা আক্তার জানায়, তার কাছে পরীক্ষার ফি বাবদ ৪০০ টাকা ও প্রবেশপত্র দেয়ার সময় আরও ৬০০ নেয়া হয়। যা বোর্ডের নিতীমালা বর্হিভুত।
বৃহস্পতিবার ফাতেমা নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, তার বাবা মারা যাওয়ায় মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে সংসার চালান মা। বেতন ও ফিসহ তিন ধাপে ৪০০, ৬০০ ও ৩০০ টাকা চাওয়া হয়। ১৫০০ টাকা দেয় ফাতেমা। বাকি টাকা না দিলে পরীক্ষার হলে ঢুকতে দিবেনা বলে স্কুলের মাঠে দাঁড় করে রাখা হয়। পরে ইউএনও ও সাংবাদিকদের বিষয়টি জানানোর কথা বললে পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেয়া হয়।
বিদ্যালয়ের সহকারী ইংরেজি শিক্ষক কবির হোসেন বলেন, বেতন, পরীক্ষার ফি, কেন্দ্র ফি ও ব্যাবহারিক ফি’র নামে ‘টাকা কালেকশনের জন্য ৭৪ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হয়নি।’
ঝর্ণা বেগম নামে একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমার স্বামী দুই বছর আগে মারা গেছেন। মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে সংসার চালানো ও সন্তানদের লেখাপড়া করানো খুবই কষ্টসাধ্য। ফরম ফিলআপের সময় বেতনের নামে ৪০০ টাকা ও পরীক্ষার ফির নামে ৬০০ টাকা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। এখন আবার ব্যাবহারিক পরীক্ষার নামে আরও ৩০০ টাকা দিতে হবে। মেয়েকে লেখাপড়া করাতে গিয়ে পাগল হয়ে যাব। ভাবছি- এভাবে খরচ চললে সংসার ও অন্য সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারবোনা। আগামিতে মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে হবে। প্রশাসনও ব্যবস্থা নেয়না।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন মুঠোফোন বলেন, ফরম পূরনের সময় বেতন ৪০০ এবং প্রবেশপত্র দেয়ার সময় কেন্দ্র ফি ৬০০ টাকা নেয়া হয় এবং ব্যাবহারিক পরীক্ষার সময় ৩০০ টাকা করে নেয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতেই টাকা নেয়া হয়েছে। তারা টাকা দিতে না চাইলে আমরা টাকা নিতাম না।’ তাছাড়া পরিচালনা কমিটি (এডহক কমিটি) সিদ্ধান্তে সব হয়েছে এবং রশীদের মাধ্যমে নিয়ে ব্যাংকে জমা হয়।
রোকেয়া হাসমতের নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সাত বছর ধরে দায়িত্বে থাকা এডহক কমিটির আহবায়ক মোজারুহুল ইসলাম তসলিম হাওলাদার বলেন, বেতন উত্তোলনের টাকার বিষয় জানি। সেগুলো ব্যাংকে জমা রাখার কথা বলা হয়ে প্রধান শিক্ষককে। অন্য টাকা নেয়ার বিষয় জানিনা।।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম সাইফুল হক বলেন, ‘বিষয়টি দেখতেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা বিনতে আমিন বলেন, কয়েকজন শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ‘উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে।’