সব টিউমার থেকেই কি ক্যানসার ছড়ায়?

বর্তমানে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বিশ্বব্যাপী। শরীরের কিছু অংশে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ক্যানসার হয়। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা না হয়, তাহলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে ক্যানসার।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ১০ মিলিয়নেরও বেশি ক্যানসার সম্পর্কিত মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ ক্যানসারই টিউমার বা মাংসপিণ্ড থেকে ছড়িয়ে পড়ে শরীরে। আর এ কারণে শরীরের কোথাও টিউমারের উৎপত্তি ঘটলে অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

একজন মানুষের শরীরের কোষগুলো ওই ব্যক্তির জীবনকাল জুড়ে বৃদ্ধি পায় ও সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে। পুরোনো কোষগুলো মরে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও জৈবিক কাজ সম্পাদনের জন্য আবার নতুন কোষ তৈরি হয়। কখনো কখনো এই প্রক্রিয়াটি ভেঙে যায় ও একটি অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি পায়।

এই কোষগুলোই মূলত টিউমার তৈরি করে। এর মধ্যে অনেকগুলো ক্যানসারে পরিণত হয় না, আবার কিছু কিছু কোষ থেকে ক্যানসারের সূত্রপাত ঘটে। ক্যানসার নির্ণয় ও চিকিৎসার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো লক্ষণগুলো শনাক্ত করা।

সব ক্যানসার কি টিউমার হয়?

সব ধরনের টিউমার ক্যানসার হয় না। তবে এর অর্থ এই নয় যে, কোনো টিউমারকে উপেক্ষা করার সুযোগ আছে। সৌম্য টিউমার ক্যানসারযুক্ত নয় ও তারা অন্যান্য টিস্যুতে আক্রমণ করে না। এ ধরনের টিউমার ধীরে ধীরে বড় হলেও জীবন-হুমকির কারণ হয় না।

স্কিন ওয়ার্ট হলো এক ধরনের টিউমার যা ছড়ায় না ও তার অবস্থানে সীমাবদ্ধ থাকে। এগুলো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সরানো যেতে পারে ও পরবর্তী সময়ে তা আর নতুন করে ফিরে আসার ঝুঁকিও থাকে না।

সৌম্য টিউমারের অন্যান্য উদাহরণ হলো- মোল, ফাইব্রয়েড ও কিছু সিস্ট। তবে এগুলোর বৃদ্ধি যাতে না ঘটে সে জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন।

ম্যালিগন্যান্ট বা প্রিম্যালিগন্যান্ট টিউমারগুলো থেকে ক্যানসারের সূত্রপাত ঘটতে পারে। প্রিম্যালিগন্যান্ট টিউমারগুলো সাধারণত আঁশযুক্ত ও পুরু ছোপযুক্ত হয়। উদাহরণস্বরূপ- লিউকোপ্লাকিয়া, যা মুখের ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।

ম্যালিগন্যান্ট টিউমারগুলোর একটি অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির হার আছে। এগুলো এপিথেলিয়াল কোষে (পেট, প্রোস্টেট, অগ্ন্যাশয়, ফুসফুস, লিভার, কোলন বা স্তন), হাড়, তরুণাস্থি, ডিম্বাশয়, অণ্ডকোষ, মস্তিষ্ক, পেট বা বুকে গঠিত হয়।

কীভাবে সতর্ক থাকবেন?

শরীরে কোনো মাংসপিণ্ড বা টিউমার দেখলে অবশ্যেই সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে স্তনে ও কোলোরেক্টাল ক্যানসারের অস্বাভাবিক গলদ খুঁজে বের করার চাবিকাঠি হলো স্ব-পরীক্ষা।

অন্যান্য ক্যানসার জন্য যেমন- লিউকেমিয়া, যেখানে পিণ্ড তৈরি হয় না, বারবার ক্ষত বা রক্তপাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ দেখলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। এসব ক্ষেত্রে দেরি করবেন না ও দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

টিউমারে ক্যানসার কীভাবে শনাক্ত করা হয়?

আপনার ডাক্তার সম্ভবত আপনাকে শারীরিকভাবে পরীক্ষা করবেন। পিণ্ডগুলোর চারপাশে ত্বকের রঙের পরিবর্তন হলে তা সাবধানে পরীক্ষা করা হবে। রক্ত পরীক্ষা ও প্রস্রাব পরীক্ষাও প্রথমে সুপারিশ করা হয়।

কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান, হাড় স্ক্যান, ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই), পজিট্রন এমিশন টমোগ্রাফি (পিইটি) স্ক্যান, আল্ট্রাসাউন্ড ও এক্স-রে’র মতো ইমেজিং পরীক্ষা ব্যবহার করেও ক্যানসার নির্ণয় করা হয়।

বায়োপসি নিয়ে ভয় পাবেন না

এটি একটি ভুল ধারণা যে, বায়োপসি করালে ক্যানসার আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। আসলে ক্যানসার চিকিৎসায় বায়োপসি একটি সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি। বায়োপসির ক্ষেত্রে ডাক্তাররা একটি ছোট টিস্যুর নমুনা নেন আক্রান্ত স্থান থেকে।

আর সেখান থেকে ক্যানসারের বৈশিষ্ট্য ও এর ধরন নির্ধারণ করেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যানসার শনাক্তের পর দ্রুত বায়োপসি করার পর রোগীর সঠিক চিকিৎসা করা হলে রোগী মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই কমানো যেতে পারে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও পড়ুন