বগুড়া শাহ সুলতান কলেজের কয়েকজন অফিস সহকারির প্রতারণার কারণে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের দাবি তারা কলেজে ভর্তির যাবতীয় নিয়ম কানুন মেনে নিয়মিত ক্লাস এবং পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর কয়েক দিন আগেই থেকেই তারা প্রবেশপত্রের জন্য অফিস সহকারি হারুনুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। হারুন তাদের আজ দেবো, কাল দেবো করছিলেন। সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার পরীক্ষার দিন সকালে তাদের আসতে বললে ওই শিক্ষার্থীরা কলেজে এসে জানতে পারেন তারা কলেজের শিক্ষার্থীই না। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রতারিত শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিলে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং আগামীতে ওই শিক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করবেন।
জানা গেছে, অভিযুক্ত অফিস সহকারী হারুনুর রশিদ মাস্টার রোলে কলেজে কর্মরত এবং কলেজের পরীক্ষা কার্যক্রম কমিটির সদস্য। তার নামে বিগত সময়ে একাধিকবার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিলো কলেজে। তিনি ছাড়াও এই প্রতারণার কর্মকাণ্ডে আমিনুল ইসলাম, আব্দুল হান্নান নামে আরও দুই সহকারী। গত বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় পাঁচ থেকে সাতজন একই রকম প্রতারণা শিকার শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়। তবে ওই সময় কলেজের শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। তারাও হারুনের মাধ্যমে ভর্তি হয়েছিলো। এর আগে হারুন গনিত বিভাগের অফিস সহকারী ছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছে অনৈতিকভাবে টাকা নেয়ার অভিযোগে তাকে সেখান থেকে বরখাস্ত করা হয়।
প্রতারণার শিকার বগুড়া সদরের সাবগ্রাম এলাকার রাশেদুল ইসলাম বলেন, তিনি এসএসসি পরীক্ষায় পাশের পর সরকারি শাহ সুলতান কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। তবে ভর্তি প্রক্রিয়ার নিয়ম অনুসারে তার সিরিয়াল আসে করোনেশন স্কুল এন্ড কলেজে। কিন্তু তিনি ভর্তির বিষয়ে জানতে শাহ সুলতান কলেজের অফিসে যোগাযোগ করেন। ওই সময় তার কথা হয় অফিস সহকারী হারুনুর রশিদের সঙ্গে। সে সময় হারুন তাকে বলেন, অফলাইন পদ্ধতিতেও ভর্তি হওয়া যাবে। তার কথামতো ৬ হাজার টাকা দেন রাশেদুল ইসলাম। এই ফি পরিশোধের রশিদও তাকে দেয়া হয়। ভর্তির পর তার শ্রেণি রোল দেয়া হয় ১৫৭৫। এরপর রাশেদুল নিয়মিত ক্লাস করেন। অংশ নিয়েছেন প্রাক নির্বাচনী ও নির্বাচনী পরীক্ষায়।
রাশেদুল ইসলাম আরও বলেন, আমাদের ভর্তির সময় টাকা নিয়েছে। এরপর কলেজের শোল্ডার ব্যাজ, পরীক্ষার জন্য টাকা নিয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ৬ হাজার টাকা দিয়ে ফরম ফিলাপও করেছি। অথচ প্রবেশপত্র নিতে এসে দেখি আমরা শিক্ষার্থী না।
প্রতারণার শিকার শারমিন আক্তার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা তো কলেজের নিয়ম অনুসারে সব করেছি। ভর্তির পর আমরা একাধিক বার হারুনের কাছে কাগজপত্র চেয়েছি। কিন্তু তিনি বলেছেন, তোমরা তো ভর্তি হয়েছো। ক্লাস করো, কাগজ দিয়ে কি করবা। একেবারে এইচএসসি পরীক্ষার পর নিও।
শাহ সুলতান কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, গতকাল বুধবার থেকে আমরা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের পেয়েছি, যারা পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে এসে ঘুরে গেছে। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি তাদের সঙ্গে প্রতারণার কথা। এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা অন্তত ২০ জন হবে। কলেজ অধ্যক্ষ যদি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা রাখতে পারেন অফিস সহকারীরা এসব প্রতারণার সুযোগ পাবে না।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে হারুনুর রশিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন , আমি কারও কাছে টাকা নেইনি। টাকা আমিনুলেরা নিতে পারে। এ বিষয়ে আপনারা বড় বাবুর সঙ্গে কথা বলেন।
অফিস সহকারী আব্দুল হান্নানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুধু একজনের কাছে ৮ হাজার টাকা নিয়েছি। সেটাও হারুনকে দিয়েছি কাজ করার জন্য। এটা আমার ভুল হয়ে গেছে।
কলেজের প্রধান সহকারী (বড়বাবু) তাজমিলুর রহমান বলেন, আমি এসবের সঙ্গে জড়িত না। এসব টাকা নেয়ার কাজ হারুনেরা করেছে। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন যারা টাকা দিছে তাদের কাছে কোনো মূল রশিদ নেই। আমার ক্যাশ মিলিয়ে দেখেন কোনো অনিয়ম পাবেন না।
শাহ সুলতান কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মোহাম্মদ আইয়ুব আলী এসব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই শিক্ষার্থীরা দুই বছরে কখনও কোনো শিক্ষকের কাছে আসেনি। তাহলে হয়তো এই অবস্থায় পড়া লাগতো না। হারুনুর রশিদ এর আগে অনৈতিক কাজে বরখাস্ত হয়েছিল। সে সময় তিনি এমন অপরাধ আর করবেন এ মর্মে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু একই ধরনের অভিযোগ আবার তার বিরুদ্ধে উঠেছে। এ জন্য আমাদের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে সবোর্চ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ রেজাউন নবী বলেন, ঘটনার মূলে অফিস সহকারী হারুন রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। মোট কতজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন ঘটনা তা বলতে পারি না। আমরা মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। তবে তারা লিখিত অভিযোগ দিলে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর এই শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বোর্ডে যোগাযোগ করা হবে। এবার হয়তো আর কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। কিন্তু আগামিতে যাতে পরীক্ষা দিতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করা হবে।