রায়পুরে হঠাৎ গরমে বাড়ছে রোগব্যাধি, হাসপাতালেও জায়গা নেই

প্রতিনিধি:কয়েকদিন আগেও রাতে হালকা শীত ও দিনে কিছুটা গরম ছিল। তবে গত কয়েক দিনের হঠাৎ গরমের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বেড়েছে রোগব্যাধি।এতে ডায়রিয়া, বমি, জ্বর, ঠান্ডা , গলাব্যথা, কাশিসহ নানা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন নানা বয়েসী মানুষ।
শিশু ও বৃদ্ধদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলে তারা এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। একদিকে হাসপাতালের সংস্কার কাজ চলমান ও বেডে জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে প্লোরেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে শিশু ও নারী রোগীদের। স্থানীয়রা বলছেন, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে ঘরে ঘরেই চলছে রোগব্যাধির প্রকোপ।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ায় হঠাৎ করে গরম পড়েছে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন মানবদেহে প্রভাব ফেলে। এতে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। তবে হঠাৎ করে চৈত্রের গরমে অসুস্থতার সংখ্যা বেড়েছে।
চিকিৎসকরা জানান, গরমের এ সময়টাতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। খাদ্য তালিকায় থাকা চাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার ও রসালো ফল তরমুজ। বিভিন্ন মৌসুমি ফলমূল যেমন, তরমুজ, লেবুর শরবত, পেয়ারা, বড়ই, কমলা, আপেল, মাল্টা, আনার, আঙুর ও কামরাঙাসহ বিভিন্ন রকমের ফল। এ সময় সুস্থ থাকতে খেতে হবে শাকসবজি ও প্রচুর পরিমাণে পানি। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
০৬ মার্চ (শনিবার) সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগসহ বেসরকারি হাসপাতাল এবং রোগ নিরাময় কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের হঠাৎ গরমে নানা রোগ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন নানা বয়সী মানুষ।
এসব রোগের মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, অধিক ঘামের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা, জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, বমি, পেটব্যথা, গলাব্যথা ও এলার্জিজনিত সমস্যাসহ নানা ধরনের রোগ। অধিকাংশ রোগীকেই চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে। খুব কমসংখ্যক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। অধিকাংশ রোগী অল্প সময়েই সেরে উঠছেন।
ভর্তি রোগী উপজেলার চরবংশী ইউনিয়নের চরকাছিয়া গ্রামের খলিল মাতাব্বর বলেন, গতকাল ইফতার করার কিছু সময় পর বমি শুরু হয়, সঙ্গে পেটব্যথা। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ভর্তি হই। এখন ভালো আছি।
চিকিৎসা নিতে আসা চরআবাবিল ইউনিয়নের গাইয়ারচর গ্রামের মোঃ হাসিম বলেন, আমার ৭ বছরের শিশু সাইদ গত কয়দিন ধরে পাতলা পায়খানাজনিত সমস্যায় ভুগছিল। বাড়ির পাশের ঔষধ দোকান থেকে ঔষধ নিয়ে খাইয়েছিলাম। তেমন কোনো উন্নতি না দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসেছি।
উপজেলার হায়দরগঞ্জ এলাকায় থেকে আসা জিহাদ হোসেন নামের শিশুর মা আসমা আক্তার জানান, জিহাদ গত কয়েক দিন ধরে হালকা জ্বর ছিল। এরইমধ্যে তার ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। এ জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসেছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বাহারুল আলম সাংবাদিকদের জানান, এই গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে শিশু ও বয়স্কদের পাশাপাশি সকল বয়সী মানুষের ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর হতে পারে। এ ছাড়া পেট খারাপ, কলেরা, আমাশয়, ডায়রিয়, নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক সময় অতিরিক্ত গরমের তীব্রতায় হিটস্ট্রোক হতে পারে।
তাই এই গরমের সময়টায় গরমের তীব্রতা থেকে সুরক্ষিত থাকতে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। হাসপাতালের দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন স্থানে প্লোরে নতুন টাইলস এর কাজ করায় প্লোরে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে কয়েক রোগীকে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা: আহাম্মেদ কবির জানান, রায়পুরসহ বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে গত কয়েকদিনে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গরমের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে বয়স্ক ও শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকের এ ব্যাপারে সর্তক থাকার জন্য এবং রোগীদের বিষয়ে দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন