নিজস্ব সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুর সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে গত ১৩ বছরেও হয়নি নির্বাচন। পৌরসভার সঙ্গে সীমানা সংক্রান্ত বিরোধে আটকে আছে ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। সর্বশেষ সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদি, দালাল বাজার, চররুহীতা, লাহারকান্দি ও বাঙ্গাখা ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়েছিল ২০১১ সালের ২৭ জুন। দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগ। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
দালাল বাজার ইউনিয়নের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আবু ছিদ্দিক অভিযোগ করে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকতে সীমানা জটিলতার দোহাই দিয়ে নির্বাচন বন্ধ রেখেছেন জনপ্রতিনিধিরা। অথচ বর্ধিত তিনটি ওয়ার্ডসহ দুইবার লক্ষ্মীপুর পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে। প্রশ্ন হলো, সীমানা জটিলতা থাকলে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা নির্বাচন হলো কীভাবে?’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন জানান, ‘সীমানা নির্ধারণী জটিলতা নিরসন হয়েছে। ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাসের কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই নির্বাচন হবে বলে আশা করছি।’
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর পৌরসভা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে চার পাশের ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কিছু অংশ কেটে নতুন তিনটি ওয়ার্ড গঠন করে ২০১৫ সালের ২৫ মে নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। এরপর শুরু হয় নানা জটিলতা। ২০১৬ সালের ২৫ মে বর্ধিত ৩টি ওয়ার্ডসহ মোট ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা নির্বাচন হয়। সেই সময় আদালত ইউনিয়ন পরিষদগুলোর সীমানা নির্ধারণ মামলা খারিজ করে দিলেও এসব ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
পরে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পক্ষ থেকে সংক্ষুব্ধরা আবারও আদালতে গেলে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি তাদের পক্ষে রায় আসে। কিন্তু পৌরসভার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট গেজেট বাতিলের আদেশ স্থগিত করলে নির্বাচন কমিশন ২০২২ সালে পূর্বের সম্প্রসারিত ওয়ার্ডগুলোসহ পৌরসভা নির্বাচন করে। এরপরও নানা অজুহাতে আটকে আছে ওই ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন।
চররুহীতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড থেকে কিছু অংশ অযোক্তিকভাবে লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। ওই গেজেটের আলোকেই ২০১৬ সালের ২৫ মে নির্বাচন কমিশন বর্ধিত তিনটি ওয়ার্ডসহ ১৫টি ওয়ার্ডে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার নির্বাচন করে। এর প্রেক্ষিতে চররুহীতা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সংক্ষুব্ধরা হাইকোর্টে মামলা করে। এ অবস্থায় পৌরসভার গেজেট বাতিলপূর্বক কর্তনকৃত ওয়ার্ডগুলোর অংশ পুনঃরুদ্ধার করে ইউপি নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’
বাঙ্গাখা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী আনোয়ার হোসেন কাজন বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর পৌরসভা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাঙ্গাখা ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে তিন হাজার ভোটার কেটে নিয়ে পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এর প্রেক্ষিতে আমরা হাইকোর্টে যাই। হাইকোর্টে মামলা চলমান থাকায় নির্বাচন হচ্ছে না। তিন হাজার ভোটার কমে যাওয়ায় সরকারি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। তবে হাইকোর্ট মামলা খারিজ করে দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, খারিজের বিষয়ে এখনও লিখিত কোনো চিঠি তারা পাননি।
এদিকে দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মীর শাহ আলম বলেন, ‘২০১৪ সালে এসে আমাদের ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কিছু অংশ পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে। এর বিরুদ্ধে ইউনিয়নের ওইসব ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আপত্তি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করে। এমতাবস্থায় ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি পৌরসভার ওই গেজেট বাতিলের আদেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু পৌরসভার আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই মাসের জন্য গেজেট বাতিলের আদেশ স্থগিত করলে নির্বাচন কমিশন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করে।’
তিনি পৌরসভার এ নির্বাচনকে অবৈধ দাবি করে বলেন, ‘পৌর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে হাইকোর্টের দেওয়া আগের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়নি। এ অবস্থায় ঝুলে আছে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন না হওয়ায় নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এলাকার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নেও ভাটা পড়েছে। জনপ্রতিনিধিরাও কাজ করছেন দায়সারাভাবে। এলাকার মানুষের খোঁজখবর নেয়ার সময়ও পান না তারা।
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক সু্রাইয়া জাহান বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওইসব ইউনিয়নে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।’